ললিত মোদী




খেলোয়াড়দের জীবনকে বদলে দেয়ায়, নিয়ম বদলে দেয়ায় কিংবা ম্যাচের ফলাফল বদলে দেয়ায় তিনি নন। তিনি শুধু নিজের খেলাটিকে বদলে দিয়েছেন। তিনি হলেন, ললিত মোদী।


ললিত মোদী আজকের এই সময়কার আলোচিত ভারতীয় ব্যক্তিত্ব। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সহকারী সচিব। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের (IPL) সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম চেয়ারম্যান এবং কমিশনার। তবে, ললিত মোদীকে আজকে আমরা সবাই ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের স্রষ্টা হিসেবেই বেশি চিনি। আসলে সকলের কাছে তিনি পরিচিত আইপিএলের জনক হিসেবেই। কিন্তু তিনি যে এই প্রতিষ্ঠানটিকে কতটা নিজের সন্তানের মতো ভাবেন, তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। তাঁর নিজের ভাষায়, "আইপিএল আমার বাচ্চা।" আর বাচ্চাদের প্রতি মা-বাবার যে দায়িত্ব ও ভালবাসা থাকে, সেটাই ললিত মোদী আইপিএল-এর প্রতি দেখান।

আজও তিনি নিজেকে একজন আইপিএল ফ্যান হিসেবেই দাবি করেন। আইপিএল-এর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ আজও বিচ্ছিন্ন হয়নি। বর্তমানে ইংল্যান্ডে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন।

ক্রিকেট বিশ্বে ললিতের প্রথম পদচারণা

ললিত মোদীর জন্ম হয় ১৯৬৩ সালের ২৯শে নভেম্বর নতুন দিল্লিতে। তাঁর পিতা কে কে মোদী ছিলেন অত্যন্ত সফল ব্যবসায়ী। তাঁর মা বিনা মোদী ছিলেন একজন সমাজকর্মী। বিজনেস ম্যানেজমেন্টে পড়াশোনা করার জন্য ললিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। অত্যন্ত তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও ম্যানেজমেন্ট স্কিলের জন্য তিনি অল্প বয়সেই ব্যবসায় খ্যাতি অর্জন করেন।

তবে, ক্রিকেট ছিল তাঁর সবচেয়ে প্রিয় খেলা। তিনি নিজেও একজন শখের ক্রিকেটার ছিলেন। তাঁর দাদা গুজরমল মোদী রাজস্থান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এই কারণেই ক্রিকেটের সঙ্গে তাঁর যোগ ছিল শৈশবকাল থেকেই। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে ২০০৫ সালের মার্চে। সেই সময় বোর্ডের উপ সভাপতি হন তিনি। এরপর তিনি বোর্ডের এই পদে অটল থাকেন ২০০৮ সাল পর্যন্ত।

আইপিএলের জন্ম

ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে ললিত মোদীর নাম আজও দুটো অক্ষরের এক সংক্ষিপ্ত শব্দে সীমিত। আইপিএল। এখানেই স্পষ্ট হয়ে যায় আইপিএল তাঁর জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় লিগটির সৃষ্টি হয়েছে ললিত মোদীর হাত ধরেই।

১৯৯৩ সালে, ললিত মোদী রাজস্থান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (RCA) সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। তখনই তাঁর মনে এই ভাবনা আসে যে ক্রিকেটকে কীভাবে আরও আকর্ষণীয় করা যায় কিংবা ক্রিকেটকে আরও আয়োজিত করা যায়। তৎকালীন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি জগমোহন ডালমিয়ার সঙ্গে ললিত মোদীর সাক্ষাৎ হয় ১৯৯৯ সালে। সেই সময়ই তাঁরা একসঙ্গে নতুন এক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজনের কথা ভাবেন। এই লিগটি পরবর্তীতে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ বা আইপিএল নামে পরিচিতি পায়।

আইপিএল প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব সবার আগে ললিত মোদীকেই দেওয়া হবে। কারণ তিনিই প্রথম এই আইডিয়া তুলেছিলেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি টেলিভিশন রাইটস, ফ্র্যাঞ্চাইজি ও স্পন্সরদের সঙ্গে সমঝোতা করে আইপিএল-এর পরিকাঠামো তৈরি করেন, যা আজও ব্যবহার করা হচ্ছে।

আইপিএলের বিশাল সাফল্য

আইপিএল-এর প্রথম আসরটি অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের এপ্রিলে। কিন্তু কেউই জানত না যে, এই প্রতিযোগিতা ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে একেবারে অন্য এক অধ্যায়ের সূচনা করবে। আইপিএলের প্রথম আসরটিই ছিল অত্যন্ত সফল। এই টুর্নামেন্টটি ভারতের ক্রিকেট অনুরাগীদের মধ্যে একটা সাড়া জাগিয়েছিল। এটি ভারতে ক্রিকেটকে একটি নতুন মাত্রা দিয়েছে। এই লিগ চালুর পর থেকে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ভারতে কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

আইপিএল-এর সাফল্যের পিছনে ললিত মোদীর দূরদর্শিতার ভূমিকা অপরিসীম। তিনি জানতেন যে, কীভাবে ক্রিকেটকে আরও বেশি আকর্ষক করে তোলা যায়। তিনি আইপিএলকে ভারতীয় সংস্কৃতিতে মিশিয়ে দিয়েছিলেন। ফলে দেশের প্রতিটা মানুষই এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে নিজেদের সংযুক্ত করতে পেরেছিল। আইপিএল-এর মাধ্যমে ললিত মোদী ভারতীয় ক্রিকেটকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যান।

বিবাদ এবং বিতর্ক

যাদের জীবন সাফল্যে পরিপূর্ণ, তাদের জীবনে বিতর্কও কম হয় না