লল বাহাদুর শাস্ত্রী জন্মজয়ন্তী




জাতির শ্রদ্ধে হয়ে উঠেছিল প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পূর্বেই 'শাস্ত্রীজী'। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর অন্তরীপ থেকেই শুরু হয়েছিল তাঁর যাত্রা। রেল মন্ত্রী থেকে গৃহমন্ত্রী, দেশের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রাস্তা যেন তাঁর জন্যই বানিয়েছিল ইতিহাস। তাঁর সরলতা, সততা তাঁকে আজও স্মরণীয় করে রেখেছে। জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ফিরে দেখা যাক সেই স্বর্ণযুগে।

শাস্ত্রীজীর জন্ম ও শৈশব:

১৯০৪ সালের ২ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশের মুঘলসরাই রেলওয়ে শহরে শারদা প্রসাদ শ্রীবাস্তব এবং রামদুলালরী দেবীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন লল বাহাদুর শাস্ত্রী। শৈশব কাটে গ্রামের বাড়িতেই। এখানে তিনি প্রাথমিক শিক্ষালাভ করেন। ১৯২১ সালে তাঁর বিবাহ হয় ললিতা দেবীর সাথে।

দেশসেবার পথে:

শাস্ত্রীজীর শৈশবকাল থেকেই দেশপ্রেমের সূচনা হয়েছিল। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি যোগদান করেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে। অসহযোগ আন্দোলন এবং স্বদেশী আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯২১ সালে কাশী বিদ্যাপীঠে যোগ দেন তিনি। সেই সঙ্গে আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন।

রাজনৈতিক জীবন:

লল বাহাদুর শাস্ত্রী প্রকৃত অর্থে "লোকনায়ক" ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বের প্রথম স্বীকৃতি এসেছিল ১৯৩০ সালে। এই সময় তিনি প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সম্পাদক হন। এরপর তিনি যোগদান করেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে। অসামান্য নেতৃত্বগুণের কারণে তিনি জওহরলাল নেহরুর নজরে পড়েন। ১৯৪৬ সালে তিনি যোগ দেন তাঁর সরকারে। তখন তাঁকে দেওয়া হয় পরিবহন এবং রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।

দেশের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী:

১৯৬৪ সালের ২৭ মে, জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পর লল বাহাদুর শাস্ত্রী ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হন। তাঁর কন্যা সুষমা শর্মা এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তাঁর বাবা প্রধানমন্ত্রী হবেন ভাবতেও পারেননি। দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম ভাষণে শাস্ত্রীজী বলেছিলেন "যতক্ষণ দেশে গরিব আছে, আমার ঘুম হবে না।"

হীরের মতো চরিত্র:

নিজের চরিত্রের দিক থেকে লল বাহাদুর শাস্ত্রী এক নিষ্ঠাবান প্রতীক। তাঁর সততা এবং কর্মদীক্ষার কথা আজও আলোচিত হয়। তিনি কখনও কোনো লোভ বা স্বার্থপরতা দেখাননি। সরলতা ছিল তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র। তাঁর সহকর্মী ও অনুগামীরা তাঁকে স্নেহবশত 'শাস্ত্রীজী' নামে ডাকতেন। তাঁর মতাদর্শ এবং নেতৃত্বের গুণাবলী আজও নবীনদের অনুপ্রেরণা জোগায়।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ:

১৯৬৫ সালে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের সূচনা হয়। শাস্ত্রীজীর নেতৃত্বে ভারত জয়ী হয়েছিল এই যুদ্ধে। তিনি সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকতেন এবং তাদের উৎসাহিত করতেন। এই যুদ্ধের সময় তিনি "জয় জওয়ান, জয় কিষাণ" স্লোগান দিয়েছিলেন, যা আজও খুব জনপ্রিয়।

তাঁর মৃত্যু এবং উত্তরাধিকার:

১৯৬৬ সালের ১১ জানুয়ারি, সোভিয়েত ইউনিয়নের তাসখন্দে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শান্তিচুক্তি সই করার পর হার্ট অ্যাটকে শাস্ত্রীজীর মৃত্যু হয়। গোটা দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর স্মরণে রাজঘাটে তাঁর সমাধি নির্মিত হয়। লল বাহাদুর শাস্ত্রীর জন্মজয়ন্তী আজও জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

সময় কেটে যায়, নেতারা আসে আর যায়। কিন্তু কিছু নেতা থাকেন, যাঁরা স্মৃতি হয়ে অমর হয়ে থাকেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন লল বাহাদুর শাস্ত্রী। জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে শ্রদ্ধা জানাই মহান এই নেতাকে।