আগুনে মিষ্টি আর শস্য ছুঁড়ে মেতে উঠুন এই লোহ্ড়ির আগামী রাতে।
পাঞ্জাবে শীতের সবচেয়ে বড় উৎসব হল লোহরি। মকর সংক্রান্তির আগের রাতে এই লোহরি পালিত হয়। যা প্রধানত শীতের অবসানের উৎসব। কৃষির সঙ্গে যুক্ত এই উৎসব। ফসল ঘরে তোলার পর এবং শীতের দিন কাটিয়ে গ্রীষ্মকাল আসার আগে এই উৎসব পালন করা হয়।
লোহরির প্রস্তুতি অনেক দিন আগে থেকেই শুরু হয়। প্রথমে বাড়ী-ঘর সাজানো হয়। অনেক জায়গায় গরু মহিষকেও সাজিয়ে তোলা হয়। রাতে গ্রামের মধ্যে একটা জায়গায় আগুন জ্বেলে উৎসব শুরু হয়। এই আগুনকে বলা হয় লোহরি।
লোহরির গল্প
এই উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেক কিংবদন্তি। তার মধ্যে এক কিংবদন্তি হল দুলিচন্দ নামে এক সাহসী যোদ্ধার। কাশ্মীর রাজ দুল্লা ভট্টের মন্ত্রী ছিল দুল্চন্দ। কিন্তু সে নিজের স্ত্রী সুন্দরির জন্য দুল্লা ভট্টর দরবার ছেড়ে দিয়েছিল। সুন্দরি দাসী হওয়ার কারণে ভট্ট তাকে ঘৃণা করতো। সে দুল্চন্দকে অনেকবার তাড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু দুল্চন্দ সুন্দরির জন্য সবকিছু তুচ্ছ করে দিয়েছিল। একবার সুন্দরির খুব অসুখ হয়। তখন গ্রামের পুরোহিত উপদেশ দিয়েছিলেন যে, সুন্দরিকে যদি ঠিক করতে হয় তাহলে আগুন জ্বেলে তাতে তিল আর ঘি দিয়ে দেবতাদের পূজা করতে হবে।
দুল্চন্দ তাই করল। সুন্দরি সুস্থ হয়ে উঠল। পরে সুন্দরির স্মৃতিতে লোহরির উৎসব শুরু হয়।
লোহরির রীতিনীতি
লোহরির দিন কিছু নিয়ম পালন করা হয়। প্রথা অনুযায়ী, লোহরির আগুনে গাঁদা, রেওয়াড়ি আর মাখন ছাড়া আর কিছুই দিতে নেই। এই আগুনে কাঁচা সুঁতো দিয়ে সাতটা পাক খায় ভক্তরা। সাত হলো পরিপূর্ণতার প্রতীক।
কিংবদন্তি আছে, লোহরির আগুনে যারা পাক দেয় তাদের বছরটা ভালো কাটে।
লোহরির রাতে এক ধরনের গান গাওয়া হয়। এই গানকে বলে লোহরি। এই গানে মহেষ, দূল্হা দূলহনের গল্প বলা হয়।
লোহরির খাবার
লোহরিতে বিশেষ কিছু খাবার খাওয়ার রীতি আছে। এই সব খাবারের মধ্যে সর্বাগ্রে রয়েছে সরষোঁ কি সাগ। এই তরকারী সরষে পাতা দিয়ে তৈরি হয়। এছাড়াও খাওয়া হয় মাক্কে কি রুটি। মক্কার আটার এই রুটি লোহরির জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়।
লোহরি উৎসবে সবাই মিলে আগুনের আশপাশে নাচে, গান গায় আর মিষ্টিমুখ হয়। এটা শুধুমাত্র উৎসব নয়, একটা সামাজিক মেলার মতো।