শিনাওয়াত্রাঃ থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী




পরিচয়ঃ

তাকসিন শিনাওয়াত্রা একজন জনপ্রিয় থাই ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ ছিলেন, যিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি থাই রাজনীতিতে একটি বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন এবং দেশে গ্রামীণ জনগণের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা অপরিসীম ছিল।

প্রারম্ভিক জীবন এবং শিক্ষাঃ

তাকসিন ১৯৪৯ সালের ২৬ জুলাই চিয়াং মাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি থাইল্যান্ডের একটি ধনী চীনা-থাই ব্যবসায়ী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ব্যাংককের রামখামহæng মহাবিদ্যালয়ে পুলিশ বিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন এবং পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইস্টার্ন কেন্টাকি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুলিশ বিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

ব্যবসায়িক কর্মজীবনঃ

তাকসিন তার পুলিশি কর্মজীবন ছেড়ে ১৯৮০ এর দশকে ব্যবসায়ের জগতে প্রবেশ করেন। তিনি টেলিযোগাযোগ, রিয়েল এস্টেট এবং অন্যান্য শিল্পে বিনিয়োগ করে একটি বিশাল ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। তিনি শিন কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, যা থাইল্যান্ডের বৃহত্তম টেলিযোগাযোগ সংস্থা।

রাজনৈতিক কর্মজীবনঃ

তাকসিন ১৯৯৪ সালে থাই রাজা মহারাজা ভূমিভল অদুল্যদেজ অনুমোদিত থাই রাজাভক্তি দলকে সমর্থন করে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তিনি ১৯৯৬ সালে ফুকেটের গভর্নর নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সালে, তিনি থাই রাজাভক্তি দলের নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করেন।

প্রধানমন্ত্রীত্বঃ

তাকসিনের প্রধানমন্ত্রীত্বকালে থাইল্যান্ডের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি দেখা যায়। তিনি গ্রামীণ অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার উন্নতির জন্য বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় সামাজিক প্রকল্প শুরু করেছিলেন। তিনি দারিদ্র্যতা হ্রাস এবং অবকাঠামো উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
  • সামাজিক প্রকল্পঃ
  • তাকসিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক প্রকল্প ছিল ৩০ বাথ স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্প, যা গরিবদের মাত্র ৩০ বাথ (১ মার্কিন ডলারের কম) দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করত। তিনি গরিব পরিবারগুলিকে নগদ সহায়তা প্রদানের জন্য এক মিলিয়ন বাথ প্রকল্পও শুরু করেছিলেন।
  • অবকাঠামো উন্নয়নঃ
  • তাকসিনের আমলে থাইল্যান্ডে ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন হয়। তিনি ব্যাংকক ম্যাস ট্রানজিট সিস্টেমের উন্নতি করেছিলেন এবং বেশ কয়েকটি নতুন রাস্তা এবং সেতু নির্মাণ করেছিলেন। তিনি সুবর্ণভূমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের তত্ত্বাবধানও করেছিলেন, যা এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি প্রধান বিমানবন্দর।

    পদচ্যুতি এবং নির্বাসনঃ

    তাকসিন ২০০৬ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদচ্যুত হন। তিনি দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন এবং পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি নির্বাসনে চলে যান এবং ইংল্যান্ডে বসবাস করতে শুরু করেন।

    বর্তমান অবস্থানঃ

    তাকসিন বর্তমানে থাইল্যান্ডে ফিরে এসেছেন এবং রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন। তিনি এখন তার ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য পরিচালনা করছেন এবং দাতব্য কার্যক্রমেও জড়িত আছেন।

    ঐতিহ্যঃ

    তাকসিন শিনাওয়াত্রাকে একজন ক্যারিশমাটিক এবং জনপ্রিয় নেতা হিসেবে দেখা হয়, যিনি থাই রাজনীতিতে একটি বিশাল ছাপ ফেলে গেছেন। তিনি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এবং সামাজিক উন্নয়নে তার ভূমিকার জন্য স্মরণ করা হবে।