“শ্রীকান্ত” নামটি শুনলেই মনে পড়ে যায় ঢাকাই সিনেমার সোনালী অধ্যায় এবং কিংবদন্তি চিত্রনায়ক আলমগীরের অসাধারণ অভিনয়। ১৯৯২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই সিনেমা শুধু ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে নয়, পুরো বাঙালি জাতির জন্য একটি আইকনিক কীর্তি।
মুন্সী প্রেমচাঁদের অমর উপন্যাস “সেবাসদন” অবলম্বনে নির্মিত “শ্রীকান্ত” সিনেমা। প্রেম, আবেগ, বিচ্ছেদ ও আত্মত্যাগের এক হৃদয়স্পর্শী গল্প। শ্রীকান্তের চরিত্রে আলমগীরের অভিনয় এতটাই নিখুঁত ছিল যে, দর্শকের মনে তিনি শ্রীকান্ত হয়েই থেকে গেছেন।
আজকের সিনেমার মাত্রা অনেক বড় হলেও, “শ্রীকান্ত” সিনেমার গল্প এবং অভিনয়ের মান আজও অতুলনীয়। এর প্রমাণ এই সিনেমার গানগুলো। “তুমি আর আমার এই কথা বলার জায়গা কোথায়”, “তুমি যদি চোখের আড়াল হও” ও “সুখের কোন দিন রহিল না আমার” গানগুলো এখনো দর্শকের মনে গভীরভাবে বসে আছে।
“শ্রীকান্ত” সিনেমাটির আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এটি একটি পরিবারের সিনেমা। সব বয়সের মানুষই এই সিনেমাটি উপভোগ করতে পারেন। শ্রীকান্ত ও মধুরিমার প্রেমের গল্প, তাদের দুঃখ-কষ্টের জীবন আর শেষ পর্যন্ত আত্মত্যাগের অথ - সবই দর্শকের চোখে জল নিয়ে আসে।
“শ্রীকান্ত” সিনেমাটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, এর আবেগপূর্ণ উপস্থাপনা। প্রতিটি দৃশ্যেই আবেগের ছোঁয়া এমনই তীব্র যে, দর্শক সিনেমার সঙ্গে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে যুক্ত করে নিতে পারেন। বিশেষ করে শ্রীকান্ত ও মধুরিমার বিয়ের দৃশ্য, বাবাকে খুঁজে পাওয়ার দৃশ্য ও শেষ দৃশ্যে শ্রীকান্তের একাকীত্ব - সবই দর্শকের মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে।
“শ্রীকান্ত” সিনেমাটি শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতির অংশ। এই সিনেমার গান, সংলাপ ও গল্প আজও বাঙালিদের মনে বেঁচে আছে। শ্রীকান্ত ও মধুরিমার প্রেমের গল্প আমাদের জীবনের প্রেম ও হতাশার গল্পের সঙ্গে মিশে গেছে।
“শ্রীকান্ত” সিনেমার সফলতার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে এর প্রতিটি বিভাগের অসাধারণ কাজ। পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের পরিচালনা, আলমগীর ও শাবনাজের অভিনয়, সলিম ফরাসির শক্তিশালী সংলাপ এবং খান আতাউর রহমানের অসাধারণ সুর ও গীতিকবিতা - সব মিলিয়ে “শ্রীকান্ত”কে একটি কালজয়ী সিনেমায় পরিণত করেছে।
আজও, যখনই “শ্রীকান্ত” সিনেমাটি টেলিভিশনে প্রচারিত হয়, তখনই বাঙালি দর্শকেরা তা মনোযোগ সহকারে দেখেন। এই সিনেমাটি শুধু একটি বিনোদন নয়, এটি বাঙালি জাতির আবেগের প্রতীক। “শ্রীকান্ত” একটি সিনেমার নাম নয়, এটি একটি ইতিহাস।