শালিগ্রামের সঙ্গে তুলসীর বিয়ে কবে?
আমাদের হিন্দু সমাজে বিয়ের সময় যে রীতিনীতি মেনে চলা হয়, তাতে বর ও কনে দু'জনেরই বয়স, জাতক, রাশি ও অন্যান্য অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে মাথাব্যাথা হওয়া স্বাভাবিক। আজকের এই টেকনলজির যুগেও সেই সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তবে, একটা বিয়ে আছে যেখানে এসব নিয়মকানুনের কোনো ঝামেলাই নেই। বরকে পছন্দ করা হয় ১১টা ঠাকুরের সঙ্গে এবং শ্বশুরবাড়ির রাজিও মাত্র একটাই কথা। তাও আবার খুব দুর্লভ প্রজাতির একটা গাছ। এই বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় শুধু মাত্র বিবাহ অনুষ্ঠানের হিন্দু ভাব ধরে রেখে এবং শ্রদ্ধানুষ্ঠান পালন করার জন্য। কিন্তু এতে সমাজের বিয়ে নিয়ে কোনো আইনের লঙ্ঘন হয় না এবং বর ও কনের বয়স নিয়েও কোনো ভাবনা থাকে না। এই বিয়েটি হল শালিগ্রাম ও তুলসীর বিয়ে।
শালিগ্রাম একটি শিলা। কিংবদন্তি আছে, এই পাথরের মধ্যে সাক্ষাৎ নারায়ণের অবস্থান। বিয়ের জন্য যেমন কনের একটি জাতক থাকে, তেমনি শালিগ্রামেরও একটা রাশি থাকে। শালিগ্রামের রাশি নির্ধারণ করার জন্য তাকে খুব খুটিয়ে পরীক্ষা করতে হয়। শুধুমাত্র একটি অভিজ্ঞ পুরোহিতই শালিগ্রামের রাশি নির্ধারণ করতে পারেন। শালিগ্রামের মধ্যে নারায়ণের অবস্থান হওয়ার কথা বলে আর সেই কারণে এই বিয়েটি যিনি করান, তিনি একজন পুরোহিত হন।
এই বিয়েতে কন্যা তুলসী। তুলসী গাছকে শ্রদ্ধার সঙ্গে নমস্কার করে নিয়ে আসা হয়। তারপর প্রথমে শালিগ্রামকে স্নান করা হয়। তারপর তুলসীর দ্বিদলকেও স্নান করানো হয়। তারপর দুজনের গায়ে হলুদ মাখানো হয়। এরপর তুলসীর সঙ্গে শালিগ্রামের বিবাহ দেওয়া হয়। হিন্দুর বিয়ের সকল রীতিনীতি যেমন সাত পাক, সিঁদুরদান, ঘোমটা খোলা সবই পালন করা হয়। তারপর বধূকে একটা কাঁসার থালায় করে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তুলসীকে বাড়ির উঠোনে একটা বিশেষ জায়গায় বসিয়ে দেওয়া হয় এবং তাকে খুব যত্ন করে দেখাশোনা করা হয়। এই বিয়ের মধ্যে দিয়ে আমরা হিন্দু ধর্মের মধ্যে থাকা অর্ধনারীশ্বর তত্ত্বকে উপলব্দি করতে পারি যেখানে নারায়ণ ও তুলসী একই দুটো সত্তার রূপ। এই বিয়েকে মাংগল্য বলে মনে করা হয় এবং এটা মনে করা হয় যে এই বিয়েতে যারা যোগ দেয় তাদের সুখ ও মানুষ্যকল্যাণ ঘটে।