শশী থারুর: এক অসম্ভব গল্প




পশ্চিমবঙ্গের ছেলে শশী থারুর আজ ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় ও সম্মানিত রাজনীতিবিদ। তিনি একজন বিশিষ্ট কূটনীতিক, লেখক এবং পণ্ডিতও। তাঁর অসাধারণ জীবনগাঁথা এক আশ্চর্যকর গল্প, যা আমাদেরকে স্বপ্ন দেখতে এবং প্রচেষ্টা করতে অনুপ্রাণিত করে।

প্রথম জীবন এবং শিক্ষা

শশী থারুর ১৯৫৬ সালের ৯ মার্চ মুম্বাইতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা, চন্দ্র প্রসাদ থারুর, ভারতীয় প্রশাসনিক পরিষেবার একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক ছিলেন। তাঁর মা, সুশীলা নায়ার, একজন শিক্ষিকা ও লেখিকা ছিলেন। থারুর তাঁর শৈশব কলকাতা, দিল্লি এবং অন্যান্য শহরে কাটিয়েছেন, কারণ তাঁর পিতার চাকরির কারণে তাঁদের অনেকবার স্থানান্তরিত হতে হয়েছিল।

থারুর সর্বদাই একজন উজ্জ্বল ছাত্র ছিলেন। তিনি দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লেচার স্কুল অফ ল অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসি থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও আইনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

কূটনৈতিক কর্মজীবন

স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর, থারুর ১৯৭৮ সালে ভারতীয় বিদেশ সেবায় যোগদান করেন। তিনি ওয়াশিংটন ডিসি, জেনেভা এবং জাতিসংঘের সদর দফতরে সহ বিভিন্ন দেশে দূত হিসেবে কাজ করেছেন। থারুর জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

একজন কূটনীতিক হিসেবে, থারুর তাঁর বৃদ্ধির জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ হিসেবেও বিবেচিত হন। তাঁর লেখা বই এবং প্রবন্ধগুলি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর তাঁর গভীর অনুধাবন এবং অন্তর্দৃষ্টির প্রমাণ দেয়।

রাজনৈতিক কর্মজীবন

২০০৯ সালে, থারুর রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন। তিনি তিরুবনন্তপুরম থেকে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হন এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রাষ্ট্রমন্ত্রী পদে নিযুক্ত হন। থারুর পররাষ্ট্র, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং প্রযুক্তি সহ বিভিন্ন মন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেছেন।

একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে, থারুর তাঁর মুখরতা এবং সংস্কারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার জন্য পরিচিত। তিনি বিভিন্ন সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের জন্যও পরিচিত। থারুর কংগ্রেস দলের একজন আধুনিকীকরনবাদী হিসেবেও বিবেচিত হন।

সাহিত্যিক অবদান

রাজনীতি এবং কূটনীতির পাশাপাশি, থারুর একজন প্রতিষ্ঠিত লেখকও। তিনি ১৮টি বইয়ের লেখক, যার মধ্যে কল্পকাহিনি, অ-কল্পকাহিনি এবং প্রবন্ধ রয়েছে। থারুর তাঁর বইয়ের জন্য অসংখ্য পুরস্কার এবং প্রশংসা পেয়েছেন।

দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান নভেল এবং এন সার্টিন আইড এর মতো তাঁর উপন্যাসগুলি তাদের চটুল কাহিনী এবং ভারতীয় সমাজের সূক্ষ্ম বর্ণনার জন্য প্রশংসিত হয়েছে। থারুর তাঁর অ-কল্পকাহিনি বইগুলির জন্যও সুপরিচিত, যেমন নিরূদ্বেগ: ইউরোপের হৃদয়ে ভারত এবং যুদ্ধ ও শান্তি।

ব্যক্তিগত জীবন

শশী থারুর তিনবার বিবাহ করেছেন। তাঁর প্রথম বিবাহ তিলোত্তমা থারুরের সঙ্গে হয়েছিল, যিনি একজন প্রাক্তন মডেল এবং লেখক ছিলেন। তাদের দুটি পুত্র রয়েছে। তিলোত্তমা থারুরের ২০০৯ সালে মৃত্যু হয়।

২০১০ সালে, থারুর সুনান্দা পুষ্করকে বিয়ে করেন, যিনি একজন সাংবাদিক এবং লেখক ছিলেন। ২০১৪ সালে সুনান্দা পুষ্করের মৃত্যু হয় এবং তাঁর মৃত্যুর তদন্ত এখনও চলছে।

২০১৮ সালে, থারুর অধ্যাপক প্রীতি জিন্টাকে বিয়ে করেন। থারুর একজন উৎসাহী পাঠক এবং ভ্রমণপিয়াসু। তিনি একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছবিগ্রাহক এবং একজন পেশাদারী গায়কও।

উত্তরাধিকার

শশী থারুর একজন সংকলনকারী ব্যক্তিত্ব যিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছেন। তিনি একজন ভালবাসার কূটনীতিক, একজন প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদ এবং একজন প্রতিভাবান লেখক। তিনি একজন জটিল এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব যিনি ভারতীয় জনজীবনকে প্রভাবিত করতে অব্যাহত রেখেছেন।

একটি আহ্বান

শশী থারুরের জীবনকাহিনী সাহস, অধ্যবসায় এবং দেশের প্রতি ভালবাসার একটি অনুস্মারক। তাঁর গল্প আমাদের স্বপ্ন দেখতে এবং প্রচেষ্টা করতে অনুপ্রাণিত করে। আমরা সকলেই আমাদের নিজস্ব শক্তি এবং দুর্বলতা নিয়ে জন্মাই।

কিন্তু থারুরের গল্প আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সঠিক মনোভাব এবং অধ্যবসায়ের সঙ্গে, আমরা যেকোনো কিছু অর্জন করতে পারি। তাই স্বপ্ন দেখুন, প্রচেষ্টা করুন এবং কখনই হ