সাওন




আমাদের বাংলার সব ঋতুর মধ্যে একটু ভিন্ন, একটু বেশি রঙিন, একটু বেশি ভিজে, একটু বেশি সজীব সাওন। বর্ষাকালের শুরুটা সাওন, বৃষ্টি কি এসেছে তাই যেন পর্যবেক্ষা করছে। আশ্বিনের রথ যখন হাজির হয়, তখন সাওনের সব আয়োজন তুঙ্গে থাকে।

সাওনের অন্যতম মজার একটা জিনিস হচ্ছে বিভিন্ন গাছের বোঁটা থেকে বেরিয়ে কিছু ছোট্ট নরম গাঢ় সবুজ পাতা ওঠা। যাদের দেখলেই এটা বোঝা যায় যে, এই বোঁটাগুলো থেকে একদিন চমৎকার ফুল বেরিয়ে আসবে। আর সেদিনই তো সাওন সান্নিধ্য ঘোষণা করে। আকাশের সব সাদা মেঘকে নিজের আদেশে সরিয়ে নিয়ে, একটা অপূর্ব দৃশ্য উপহার দেয় সাওন।

সাওনের বৃষ্টি হচ্ছে সব বৃষ্টির রাজা। কখনোই এই বৃষ্টির সঙ্গে অন্য কোনো ঋতুর বৃষ্টির তুলনা হয় না। এই বৃষ্টি শহরের গলি খান খান করে দেয়, ছাদ থেকে ঝরে পড়া জলের তোড়ায় রাস্তা যান্ত্রিক শব্দে ভরে ওঠে। অফিসগুলো খালি হয়ে যায়।

বাংলার মানুষের মনেও সাওনের জায়গাটা খুব আলাদা। সাওনের বৃষ্টি না হলে মনটা সত্যিই খুশি হয় না। তাই বলে কি বৃষ্টি নামলেই খুশি হতে হবে? হ্যাঁ, খুশি হতেই হবে। কারণ এই বৃষ্টি না হলে আমাদের পৃথিবীটা তো কেমন যেন মরা মরা শুকনো হয়ে যাবে।

সাওনের সঙ্গে আদিবাসী সংস্কৃতির একটা গভীর সম্পর্ক আছে। তাঁদের সংস্কৃতিতে সাওনের একটা বিশেষ জায়গা আছে। বর্ষাকালের প্রথম বৃষ্টি নামার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা বর্ষা উৎসব পালন করে। তাঁরা গান গেয়ে, নাচে অংশ নিয়ে এই উৎসব পালন করে। এই উৎসবটি আদিবাসীদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান।

আমাদের দেশের অনেক জায়গাতে সাওনের সময় বিভিন্ন ধরনের উৎসবের আয়োজন করা হয়। এই উৎসবগুলোতে নানারকম খাবার দাবার, গান বাজনা, নাচের আয়োজন করা হয়। এই উৎসবগুলোতে সবাই মিলে আনন্দ করে।

সাওনের সঙ্গে অনেক কাহিনী জড়িয়ে আছে। এই কাহিনীগুলো সাওনের রহস্যকে আরও বৃদ্ধি করে। এই কাহিনীগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে, সাওনের সময় দেবরাজ ইন্দ্র জলের ঢেউয়ের সঙ্গে নেমে আসেন। এই কারণে সাওনের বৃষ্টি এতো বেশি হয়।

সাওন আসে, আর সঙ্গে নিয়ে আসে আনন্দ, উচ্ছ্বাস আর প্রাণবন্ততা। এই ঋতুটা এমন একটা ঋতু যা আমাদের মনে প্রশান্তি আর শান্তি এনে দেয়। তাই এবারের সাওনকে আলিঙ্গন করুন, আনন্দ করুন, ভিজে যান।