সঙ্কট চতুর্থী ব্রত কথা
একটি প্রাচীন কাহিনী
একটি ছোট্ট গ্রামে, রবি নামে এক দরিদ্র কিন্তু ভক্তিময় কৃষক বাস করতেন। তিনি তার স্ত্রী সাধনা এবং তাদের ছোট্ট ছেলে চন্দ্রের সাথে একটি কুটিরে থাকতেন। রবি তার জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন, কিন্তু ফসল ভালো না হওয়ায় তাদের খুব কষ্টে সংসার চালাতে হত।
এক বছর, শুষ্কতার কারণে গ্রামে খরা দেখা দিল। রবির ফসল শুকিয়ে গেল এবং তার পরিবার অনাহারে পড়ল। অবশেষে, সাধনা সঙ্কট চতুর্থী ব্রত রাখার কথা ভাবলেন, যা শিব ও গণেশের উপাসনা করা হয়। তিনি বিশ্বাস করতেন যে এই ব্রত তাদের দুর্দশা দূর করবে।
ব্রতের দিনটি এল এবং সাধনা ভোরবেলা থেকেই তৈরি হতে শুরু করলেন। তিনি স্নান করলেন এবং নতুন কাপড় পরলেন। তারপর তিনি তার ঘরের একটি মণ্ডপে একটি ছোট মন্দির সাজালেন এবং শিব ও গণেশের মূর্তি রাখলেন।
সাধনা সারাদিন উপবাস রাখলেন এবং সন্ধ্যায় তিনি মন্দিরে পূজা শুরু করলেন। তিনি পুষ্প, ধূপ এবং প্রদীপ দিয়ে শিব ও গণেশকে অর্চনা করলেন। তিনি তাদের প্রার্থনা করলেন যাতে তার পরিবারের দুর্দশা দূর হয় এবং তাদের রক্ষা করা হয়।
পূজার শেষে, সাধনা বিষ্ণু কাব্য থেকে শ্লোক পাঠ করলেন এবং সঙ্কট চতুর্থীর কাহিনী বললেন। কাহিনীটি ছিল এই রকম:
এক সময়, রাজা দিলীপের তিন স্ত্রী ছিলেন। বড় স্ত্রীর নাম সুদেষ্ণা, মধ্যম স্ত্রীর নাম সুনন্দা এবং কনিষ্ঠ স্ত্রীর নাম নীলমালা। দিলীপের ছিলেন না সন্তান। তাই তিনি তার মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করলেন এবং সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি সঙ্কট চতুর্থীর ব্রত রাখবেন।
রাজা দিলীপ এবং তার রানীরা ভক্তি সহকারে ব্রত রাখলেন। ব্রতের শেষে, তাদের কন্যা সন্তানের জন্ম হল। কন্যার নাম রাখা হল কাঞ্চনা।
কিছুদিন পরে, রানী সুদেষ্ণা আবার একটি সন্তানের জন্ম দেন। এবার তার পুত্রসন্তান হয়। পুত্রের নামকরণ করা হয় সুদর্শন।
রানী নীলমালা সন্তানহীনা ছিলেন। তাই তিনি রানী সুদেষ্ণার কাছে গিয়ে তার পুত্রকে চাইলেন। সুদেষ্ণা রাজি হলেন। তিনি সুদর্শনকে রানী নীলমালার কাছে দিলেন। নীলমালা সুদর্শনকে খুব আদর করলেন এবং তার নিজের পুত্রের মতো ভালবাসলেন।
একদিন, সঙ্কট চতুর্থীর দিন, সুদর্শন রাজবাড়ির বাগানে খেলছিল। হঠাৎ, তিনি একটি বিষধর সাপের কামড়ে মারা যান। নীলমালা সুদর্শনের মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে বাগানে গেলেন। তিনি সুদর্শনের মৃতদেহ জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন।
রানী সুদেষ্ণাও বাগানে এলেন। তিনি সুদর্শনের মৃতদেহ দেখে আর্তনাদ করে কাঁদতে লাগলেন। তিনি নিজের বুকে আঘাত করতে লাগলেন এবং বললেন, "আমি আর বাঁচতে চাই না। আমার প্রিয় পুত্রকে আমার থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।"
এ সময়, দেবতা গণেশ রানী সুদেষ্ণার সামনে প্রকাশ পেলেন। তিনি সুদেষ্ণাকে সান্ত্বনা দিলেন এবং বললেন, "তুমি কাঁদো না, রানি। আমি তোমার পুত্রকে পুনর্জীবিত করব।"
গণেশ সুদর্শনের মৃতদেহে তার শুঁড় দিলেন এবং "ওঁ গণেশায় নমঃ" মন্ত্রটি জপ করলেন। মন্ত্রের শক্তিতে সুদর্শন পুনর্জীবিত হলেন।
রানী সুদেষ্ণা এবং রানী নীলমালা খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলেন। তারা গণেশকে ধন্যবাদ দিলেন।
গণেশ বললেন, "তোমরা প্রতি বছর সঙ্কট চতুর্থী ব্রত রাখ। এই ব্রত রাখলে তোমাদের সব দুঃখ-কষ্ট দূর হবে এবং তোমাদের সন্তানরা সুস্থ ও সুরক্ষিত থাকবে।"
সাধনা এই কাহিনী শেষ করলেন এবং শিব ও গণেশকে ধন্যবাদ দিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে এই ব্রত তাদের পরিবারকেও রক্ষা করবে।
পরের দিন, রবিকে তার খেতের মধ্যে একটি সোনার মুদ্রা পাওয়া গেল। তিনি সেই মুদ্রা দিয়ে তার পরিবারের জন্য খাবার কিনেছিলেন এবং তাদের দুর্দশা দূর হয়ে গিয়েছিল। সাধনা বুঝতে পারলেন যে সঙ্কট চতুর্থী ব্রত তাদের কাছে আশীর্বাদ বয়ে এনেছে।
তারপর থেকে, রবি এবং সাধনা প্রতি বছর সঙ্কট চতুর্থী ব্রত রাখতেন। তাদের বিশ্বাস ছিল যে এই ব্রত তাদের পরিবারকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে। এবং তাই হয়েছিল।