সচীন তেণ্ডুলকরের ফ্যানলোক




আজকে সচীন তেণ্ডুলকর যে সারা বিশ্বের একটি পরিচিত নাম, এটাই স্বাভাবিক বলে মনে হয়। তবে একটা সময় ছিল যখন তিনি শুধুমাত্র একজন অপরিচিত ছোট ছেলে, যার ব্যাটিং দেখে কেউই বলতে পারত না যে তিনি ভারতের জন্য কিংবদন্তি হয়ে উঠবেন।
সচীন তেণ্ডুলকর ১৯৭৩ সালের ২৪ এপ্রিল মুম্বাইয়ের দাদর এলাকায় একটা মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব অভাব-অনটনে কাটেনি, তবে তিনি খেলার প্রতি তার অনুরাগকে কখনও দমন করেননি।
তার বাবার নাম রমেশ তেণ্ডুলকর, যিনি মূলত গোয়া থেকে মুম্বাই এসেছিলেন এবং মারাঠি সাহিত্যের একজন বিখ্যাত লেখক ছিলেন। তার মা রাজনি তেণ্ডুলকর ছিলেন ইন্সুরেন্স কোম্পানির কর্মচারী। সচীনের একটি বড় ভাই অজিত রয়েছে, যিনি সচীনের ব্যাটিংয়ের অন্যতম প্রধান অনুপ্রেরণা ছিলেন।
সচীন তেণ্ডুলকর তার প্রাথমিক শিক্ষা শারদাশ্রম বিদ্যামন্দিরে গ্রহণ করেন। তিনি খুবই মেধাবী ছাত্র ছিলেন এবং তার পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিকেটের প্রতিও প্রচণ্ড অনুরাগ ছিল। তিনি ক্রিকেট খেলার জন্য বিদ্যালয়ের অন্য ছাত্রদের সঙ্গে অনেক সময় কাটাতেন।
সচীন শৈশবকাল থেকেই ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন। তিনি প্রথমে রামকৃষ্ণ আশ্রম ক্রিকেট ক্লাবে অনুশীলন করতেন। ক্রমশ তার ব্যাটিংয়ে দক্ষতা বাড়তে থাকে। তিনি তার ব্যাটিংয়ে এতটাই দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন যে শুধু মাত্র ১১ বছর বয়সে তাকে মুম্বাই ক্রিকেট দলের পক্ষে খেলার সুযোগ দেওয়া হয়।
সচীন তেণ্ডুলকর তার আন্তর্জাতিক অভিষেক করেন ১৯৮৯ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। তিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সী ছিলেন এবং তিনি তার প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন। তবে, তিনি হতাশ হননি এবং ক্রিকেটে তার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে গেছেন।
সচীন তেণ্ডুলকর তার ক্যারিয়ারের মধ্যে অনেক রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। তিনি একমাত্র খেলোয়াড় যিনি টেস্ট ক্রিকেটে ১৫ হাজারেরও বেশি রান এবং ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৮ হাজারেরও বেশি রান করেছেন। তিনি টেস্ট ক্রিকেটে ৫১ এবং ওয়ানডে ক্রিকেটে ৪৯ সেঞ্চুরি করেছেন।
সচীন তেণ্ডুলকর ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বাধিক সফল ব্যাটসম্যানদের একজন হিসাবে বিবেচিত হন। তিনি ভারতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সফল অধিনায়ক ছিলেন। তিনি ভারতীয় দলকে ২০০৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ এবং ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় করতে সাহায্য করেছিলেন।
সচীন তেণ্ডুলকরকে ভারত সরকার ভারত রত্ন পুরস্কারে ভূষিত করেছে। তিনি এই পুরস্কার পাওয়া তৃতীয় ক্রীড়াবিদ। তার সম্মানে মুম্বাই এয়ারপোর্টের নামও সচীন তেণ্ডুলকর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রাখা হয়েছে।
সচীন তেণ্ডুলকর শুধুমাত্র একজন অসাধারণ ক্রিকেটারই নন, তিনি ভারতের একজন জাতীয় হিরো। তিনি ভারতের যুবকদের অনুপ্রেরণা যোগান এবং তিনি দেশের গর্ব। তিনি সারা বিশ্বে ক্রিকেটের রাষ্ট্রদূত।