সত্যিই কি দরকার 'ইউনিফর্ম সিভিল কোড'?




পরিচিতি:
ভারতের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ব্যক্তিগত আইনগুলির একটি সাধারণ সংহিতায় সংহত করার প্রস্তাব - "ইউনিফর্ম সিভিল কোড" - বহু বছর ধরে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রস্তাবটির সমর্থকরা যুক্তি দিচ্ছেন যে এটি ধর্মীয় সীমানা অতিক্রম করে সকল নাগরিকের জন্য সমতা এবং একতাকে নিশ্চিত করবে, যখন বিরোধীরা এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন যে এটি অল্পসংখ্যকদের অধিকার ক্ষুন্ন করবে এবং তাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে হুমকির সামনে ফেলবে।
একটি সাধারণ সংহিতার সম্ভাব্য সুবিধাগুলি:
ইউনিফর্ম সিভিল কোডের সমর্থকরা যুক্তি দেন যে এটি সকল নাগরিকের জন্য সমতা নিশ্চিত করবে। বর্তমানে, হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীর তাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত আইন রয়েছে, যা বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার এবং রক্ষণাবেক্ষণের মতো বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করে। এই আইনগুলি প্রায়ই বিরোধী, যা বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন এবং বৈষম্য তৈরি করতে পারে।
একটি ইউনিফর্ম সিভিল কোড এ러한 বৈষম্য দূর করবে এবং আইনের শাসন সহ সমস্ত নাগরিকদের জন্য একটি সমান ভিত্তি প্রদান করবে। এটি ধর্মীয় সীমানা অতিক্রম করে জাতীয় একতা এবং সংহতিও প্রচার করবে।
সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ এবং উদ্বেগ:
যাইহোক, একটি ইউনিফর্ম সিভিল কোড প্রস্তাবের বিষয়ে উদ্বেগেরও অভাব নেই। অল্পসংখ্যক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা উদ্বিগ্ন যে এটি তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং অনুশীলনের সাথে হস্তক্ষেপ করবে। তাদের যুক্তি হল যে ব্যক্তিগত আইনগুলি সাধারণত ধর্মীয় গ্রন্থে এবং ঐতিহ্যগত রীতিনীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় এবং সেগুলিকে হঠাৎ বাতিল করা তাদের সংস্কৃতিতে হস্তক্ষেপ করবে।
অন্যরা যুক্তি দেন যে একটি ইউনিফর্ম সিভিল কোড তৈরি করা কঠিন হবে, কারণ ভারতের বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে বিশ্বাস এবং প্রথাগুলি ব্যাপকভাবে বৈচিত্র্যময়। তারা উদ্বিগ্ন যে জোরপূর্বক একটি সাধারণ সংহিতা আরোপ করা যেকোন একটি গোষ্ঠীর উপর অন্যায় হবে।
বর্তমান দৃশ্যপট:
ইউনিফর্ম সিভিল কোড প্রস্তাবটি বর্তমানে সরকার কর্তৃক বিবেচনাধীন রয়েছে। ২০১৯ সালে, সুপ্রিম কোর্ট তিনটি তালাক বা তালাক-ই-বিদ্দাত প্রথাকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করে। এই রায়কে সমর্থকরা একটি ইউনিফর্ম সিভিল কোড প্রতিষ্ঠার দিকে একটি পদক্ষেপ হিসাবে দেখেন, যখন বিরোধীরা এটিকে অল্পসংখ্যকদের অধিকার ক্ষুন্ন করার একটি হিসাবে দেখেন।
উপসংহার:
ইউনিফর্ম সিভিল কোড একটি জটিল এবং বিতর্কিত প্রস্তাব যা ভারতের সামাজিক কাঠামোর গভীরতায় প্রবেশ করে। সকল নাগরিকের জন্য সমতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর অধিকার এবং সংস্কৃতি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার মধ্যে এটি একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য খুঁজে বের করার প্রচেষ্টার প্রতিনিধিত্ব করে। শেষ পর্যন্ত, এই প্রস্তাবটি প্রয়োগ কীভাবে করা হয় তা এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে যে এটি ভারতীয় সমাজে ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে কিনা তা নির্ধারণ করবে।