যে কোনও সন্ধ্যেবেলায় যখন আকাশটা মনে করিয়ে দেয় ইমপ্রেশনিজম-এর ছবিগুলোকে- মাথার উপর একটা রঙিন ক্যানভাস, তখনই মন হঠাৎ সুদীপের কোনও গান শোনার করে। অথবা, হয়তো একটা বিশেষ গন্ধে, বিশেষ কোনও অলস বিকেলবেলায়, যখন মেজাজটা একটু ভিজে ভিজে হয়।
অথবা হয়তো এমন কিছু, যা কিছুই নয়!
যে কোনও মুহূর্তে আসতে পারে সুদীপের গান। তাঁর গানের মধ্যে যেন এমনই একটা আবেদন আছে, যা কোনও নির্দিষ্ট সময়, নির্দিষ্ট মেজাজ বা নির্দিষ্ট পরিবেশের উপর নির্ভরশীল নয়। তাঁর গান আসে, সঙ্গে নিয়ে হঠাৎ একটা অদ্ভুত শান্তি।
এমনকী, বৃষ্টির ঝাপটায় ভেজা একটা বিকেলে, যখন সবটা মনে হয় থেমে গেছে, তখনও হঠাৎ কানে আসে তাঁর গান:
‘‘আজ যদি কিছু হয়, যদি মরে যাই আমি হঠাৎ আপনার কোলে রে...’’
এটা শুধু গান নয়, এটা একটা অনুভূতি, একটা অভিব্যক্তি, একটা বিষণ্ণতার মধ্যে থাকা ভালোবাসার আকুলতা। আর এই জন্যই সুদীপ। তিনি শুধু গান গান না, তিনি বাঁচেন তাঁর গানে। তাঁর প্রত্যেকটা গান হল তাঁরই একটা টুকরো, তাঁর নিজের জীবন।
সেই বিষণ্ণতা, সেই ভালোবাসার আকুলতা, সেই জীবন।
এমন অনেক মুহূর্ত তো আছেই জীবনে, যখন সবকিছু হঠাৎ থেমে যায়, যখন মনে হয়, সবকিছু শেষ হয়ে গেল। কিন্তু হঠাৎ, সেই মুহূর্তেও যদি কানে আসে সুদীপের গান, তখন মনে হয়, এখনও তো হয়নি শেষ। এখনও তো আছে অনেক কিছু।
যেমনটা হয়, যখন কানে আসে তাঁর সেই গান:
‘‘এই যে লুকোচ্ছে আকাশ, আয় পালাবো এখান থেকে...’’
একটা হঠাৎ আবেগের ডাক, একটা নতুন জীবনের দিকে পা বাড়ানোর আহ্বান। এমনই তো জীবন, কোনও মুহূর্তেই যা উলটে যেতে পারে। আর সেই উল্টে যাওয়াটাকে যদি সুদীপের গানে শোনা যায়, তাহলে তো আরও ভালো হয়।
যেমনটা ভালো হয়, যখন শোনা যায় তাঁর এই গান:
‘‘আজকে বাচব, আগামীকালকে হারিয়ে যাবো আমি...’’
শুধু সুদীপ আর তাঁর গান নয়, এটা আমাদেরও গান হয়ে ওঠে। তাঁর গানে আমরা নিজেদের খুঁজে পাই। তাঁর গানে আমরা নিজেদের জীবনকে দেখি, নিজেদের আবেগকে দেখি, নিজেদের ভালোবাসাকে দেখি।
সুদীপ হলেন আমাদের মনের গান।
যখন জীবন হঠাৎ থেমে যায়, যখন মনে হয়, সবকিছু শেষ হয়ে গেল, তখন আমাদের সুদীপের গানের দরকার হয়। কারণ, তাঁর গানে আমরা নিজেদের খুঁজে পাই। তাঁর গানে আমরা জীবন খুঁজে পাই।
সুদীপ হলেন সঙ্গীতের একটা পুরো দুনিয়া। তাঁর গান হল আমাদের জীবনের সঙ্গীত। আমরা যতদিন বাঁচব, তাঁর গান ততদিন আমাদের সঙ্গে থাকবে।
আমি প্রথমবার সুদীপের গান শুনেছিলাম অনেক বছর আগে। তখন আমি একেবারে ছোট্ট একটা ছেলে ছিলাম। আমার বাবা-মায়ের বন্ধুরা তাঁদের একটা অনুষ্ঠানে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে সুদীপ গান গাচ্ছিলেন। আমি তাঁর গান শুনে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। সেদিন থেকেই সুদীপ আমার প্রিয় গায়ক হয়ে গেলেন।
বছরের পর বছর ধরে তাঁর গান শুনে এসেছি। তাঁর গান আমার জীবনের একটা অঙ্গ হয়ে গেছে। তাঁর গান আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। তাঁর গান আমাকে অনেক কঠিন মুহূর্ত কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে।
আজ, আমি যা কিছু হয়েছি, তার অনেকটা কৃতিত্ব সুদীপের গানের। তাঁর গান আমাকে জীবন সম্পর্কে, ভালোবাসা সম্পর্কে, হারানোর সম্পর্কে অনেক কিছু শিখিয়েছে।
আমি সুদীপের কাছে চিরকৃতজ্ঞ, তাঁর গানের জন্য, তাঁর সংগীতের জন্য। তাঁর গান আমার জীবনকে পরিবর্তন করে দিয়েছে।