কথিত আছে, রাজা দশরথের রানীর কদর্য চেহারার কারণে কেউ তাকে বিয়ে করতে চায় না। তখন ঋষি বিশ্বামিত্র মন্ত্র দান করে তার চেহারাকে সুশ্রী করে তোলেন। এই মন্ত্রের প্রভাবে রানীর গর্ভ ব্যথা শুরু হয়। তাই তাকে স্বামীর দ্বারা সৈন্ধবী পাতার উপর শায়িত করা হয়। এইভাবে জন্ম নেয় রামচন্দ্রের। তাই সৈন্ধবীকে রামজন্মী পাতাও বলা হয়। আর এই কারণে বর্ষাকালে বাড়ির সামনে সৈন্ধবী পাতা গেঁথে রাখার প্রথা আজও রয়েছে।
ধর্মীয় তাৎপর্যহিন্দু ধর্মে সৈন্ধবীকে পবিত্র উদ্ভিদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে শ্রীকৃষ্ণের পুজোয় এটি ব্যবহার করা হয়। কারণ বলা হয়, সৈন্ধবী পাতায় শ্রীকৃষ্ণ আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। তাই পুজোর সময় ভগবানের আসনে বা পাশে সৈন্ধবী পাতা রেখে দেওয়ার নিয়ম আছে।
ওষধীয় গুণাবলীসৈন্ধবী শুধু স্বাদে-গন্ধে নয়, ওষধীয় গুণেও সমৃদ্ধ। এতে আছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, ভিটামিন সি, এবং রেশা। এই কারণে সৈন্ধবী ভালো অ্যান্টি-অ্যাজম্যাটিক এবং ক্যান্সার বিরোধী হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও, এটি রক্ত শোধন, পাকস্থলীর সমস্যা, এবং জ্বর কমাতেও সহায়ক।
খাদ্য হিসেবে ব্যবহারবাঙালিদের কাছে সৈন্ধবী সবচেয়ে প্রিয় সব্জির একটি। সবুজ শাক হিসেবে সৈন্ধবী আমাদের খাদ্যতালিকায় বিশেষ স্থান দখল করে আছে। তবে শুধু সব্জী রান্না ছাড়াও সৈন্ধবী পাতা সুন্দর করে সজ্জিত করা হয় কোনো সুস্বাদু খাবারের উপরে।
গন্ধের আবেদনসৈন্ধবীর গন্ধই সবচেয়ে বেশি মনোমুগ্ধকর। বর্ষার স্যাঁতসেঁতে মাটিতে এই গন্ধের স্রোত রেখে যায় আমাদের মনে আজীবনের স্মৃতি। তবে এই গন্ধের কিছু বৈজ্ঞানিক কারণও আছে। সৈন্ধবী পাতায় যে তেল থাকে, তাতে রয়েছে কিছু রাসায়নিক যৌগ। বর্ষার সময় মাটি থেকে এই যৌগগুলি বেরিয়ে আসে এবং আমাদের নাক পর্যন্ত পৌঁছে দেয় আনন্দদায়ক এই সুবাস।
তাই দেখা গেল, সৈন্ধবী শুধু একটি সব্জিই নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের সংস্কৃতি, ধর্মবিশ্বাস এবং অতীতের গল্প। এর ঔষধীয় গুণ এবং মনোমুগ্ধকর সুবাস আমাদের সুস্থতা এবং আনন্দকে আরো বাড়িয়ে দেয়। তাই বর্ষার এই মরশুমে প্রিয় সৈন্ধবীকে আমরা গ্রহণ করব বড় আনন্দ এবং উৎসাহ নিয়ে।