সুপ্রিয়া শ্রীনাটে




মুম্বইকর হিসেবে আমি অনেক অভিনেতাকেই ভালোবাসি, কিন্তু যাদের জন্য আমার অন্তরের বিশেষ একটা জায়গা আছে, তাদের মধ্যে সুপ্রিয়া শ্রীনাটে অন্যতম। তাঁর মুখে সেই যে বিশেষ মায়াভরা হাসি, তা যেনো হৃদয়স্পর্শী কোনো স্মৃতিকে মুছিয়ে ফেলার ক্ষমতা রাখে। তাঁর অভিনয় যেনো এক ম্যাজিক, যা প্রতিটি চরিত্রকে জীবন্ত করে তোলে।
প্রথমে তো 'অমর মিত্র' থেকে তাঁকে চিনতাম। স্কুলের শিশু মনের কাছে তিনি ছিলেন মিতালি, যিনি স্কুলের অন্যতম আকর্ষণীয় প্রাথমিক শিক্ষিকা। কিন্তু অল্প কয়েকটি পর্বের মধ্যেই তিনি আমার কাছে সুপ্রিয়া শ্রীনাটে হয়ে উঠলেন। কারণ, তাঁর অভিনয় দেখে মনে হতো, যেনো নিজের জীবনের মানুষটি স্ক্রিনে অভিনয় করছে। তিনি অভিনয় করছেন না, বরং স্ক্রিনে নিজেকেই দেখাচ্ছেন।
তারপর ধীরে ধীরে তাঁর অন্যান্য কাজ আমার নজরে পড়তে শুরু করল। "চলা হাওয়া ইয়ু ঢগলে" সিরিয়ালের শ্রদ্ধা তো কেমন এক অদ্ভুত আবেগের জন্ম দিয়েছিল। কর্তব্য আর ভালোবাসার মাঝে দোলায়িত সেই মেয়েটির চরিত্রকে যেমন সুন্দরভাবে তিনি ফুটিয়ে তুলেছিলেন, তা অসাধারণ ছিল। তাঁর সেই কণ্ঠস্বর, তাঁর চোখের অভিব্যক্তি, সবকিছুই মনকে স্পর্শ করেছিল।
কিন্তু যা আমাকে সবচেয়ে বেশি বিস্মিত করেছিল তা হলো, "আই অ্যাম কলাম" সিনেমায় তাঁর অভিনয়। লাল পরী নামের সেই সেক্স ওয়ার্কারের চরিত্র আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছিল। সমাজের অবহেলিত এই নারীদের জীবন কতটা কঠিন, কতটা মর্মান্তিক, তা বুঝতে সাহায্য করেছিল তাঁর অভিনয়। তাঁর প্রতিটি সংলাপ যেনো আমার আত্মাকে নাড়া দিয়েছিল।
তাঁর অভিনয়ের বিষয়টা আমাকে কেমন জানি মুগ্ধ করে ফেলে। তিনি কিভাবে একটি চরিত্রে এমনভাবে ঢুকে যেতে পারেন, তা ভাবলেই অবাক লাগে। তাঁর চরিত্রগুলো যেনো তাঁরই অংশ হয়ে যায়, যা আমাদের জীবনের একটি অংশ হয়ে ওঠে।
সুপ্রিয়া শ্রীনাটে আমার কাছে কেবল একজন অভিনেত্রী নন, তিনি একজন আর্টিস্ট। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে মানুষের জীবনকে স্পর্শ করেন, তাদের ভাবতে বাধ্য করেন, অনুভব করান। তিনি আমাদের জীবনে আনন্দ, বিষাদ, সবকিছুই এনে দেন। তাঁর অভিনয় একটি আশীর্বাদ, যা আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে। তাই, তাঁর প্রতি আমার অন্তর থেকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। তিনি যেনো সবসময় অভিনয়ের শিখরে থাকেন, এই কামনা।