সঙ্গীতের স্বর্ণযুগের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিল তিনি। সঙ্গীত প্রযোজনা ও রচনার জগতে তার অসাধারণ অবদান। তার হাত ধরে সৃষ্টি হয়েছে অগণিত অমর সুরের সম্ভার। তিনিই কিংবদন্তি "কুইনসি জোন্স"।
১৯৩৩ সালে শিকাগোর এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া জোন্সের প্রতি সঙ্গীতের টান ছিল শৈশব থেকেই। খুব অল্প বয়সে তিনি শিকাগোর রাস্তায় ট্রাম্পেট বাজিয়ে অর্থ উপার্জন শুরু করেন। ক্রমে তার খ্যাতি বাড়তে থাকে এবং বিখ্যাত জ্যাজ কিংবদন্তি ডিজি গিলেস্পি ও লায়নেল হ্যাম্পটনের দলের সাথে কাজ করার সুযোগ পান।
পঞ্চাশের দশকে নিজের প্রযোজনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। তখনকার চলতি ট্রেন্ড থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন। জ্যাজ এবং পপের মিশ্রণে তৈরি করেন নতুন এক সঙ্গীতধারা। তার সৃষ্ট "বস নোভা" সঙ্গীতের জগতে সত্যিকারের বিপ্লব ঘটায়।
মাইকেল জ্যাকসনের "থ্রিলার" অ্যালবামের প্রযোজনা জোন্সের ক্যারিয়ারের একটি মাইলফলক। এটিই সর্বকালের সর্বোচ্চ বিক্রিত অ্যালবাম। তার প্রযোজনায় মাইকেল জ্যাকসনের "ব্যাড", "লিবারিয়ান গার্ল" সহ অসংখ্য অমর হিটগান সৃষ্টি হয়।
কুইনসি জোন্সের মৃত্যু সঙ্গীত জগতের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি নিজের অবিস্মরণীয় সুরের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষের হৃদয়ে একটি স্থায়ী স্মৃতি রেখে গেছেন। তার সঙ্গীত আজও মানুষকে আনন্দ, উল্লাস ও অনুপ্রেরণা দেয়।
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করার প্রতিভাকুইনসি জোন্সের সফলতার অন্যতম কারণ ছিল সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করার বিশেষ ক্ষমতা। তিনি সঙ্গীতের বিবর্তনকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষন করতেন। প্রচলিত ধারার বাইরে নিজস্ব সৃষ্টি তৈরির সাহস তাকে সবসময়ই অন্যদের থেকে আলাদা করে রেখেছে।
উদাহরণ: ১৯৬০ সালের শেষের দিকে রক এবং পপ সঙ্গীতের প্রচণ্ড জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে। কুইনসি জোন্স এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে জ্যাজ এবং পপের একটি অনন্য মিশ্রণ তৈরি করেন। এই নতুন সঙ্গীতধারা শ্রোতাদের কাছে অভূতপূর্ব সাড়া ফেলে।
সহযোগিতার শক্তিতে বিশ্বাস
জোন্স সবসময়ই বিশ্বাস করতেন যে সহযোগিতায় দুর্দান্ত ফলাফল পাওয়া যায়। তিনি বিভিন্ন শিল্পী, গীতিকার এবং প্রযোজকদের সাথে কাজ করেছেন। এই সহযোগিতা তার সৃষ্টিতে এক অনন্য মাত্রা যোগ করেছে।
উদাহরণ: "থ্রিলার" অ্যালবামটি মাইকেল জ্যাকসনের সাথে সহযোগিতায় তৈরি হয়েছিল। এই অ্যালবামের সাফল্যের অন্যতম কারণ ছিল জোন্স এবং জ্যাকসনের মধ্যকার পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা।
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সঙ্গীতের প্রতি কুইনসি জোন্সের ভালোবাসা ও উৎসাহ অটুট ছিল। তিনি একজন অনুপ্রেরণাদায়ক ব্যক্তিত্ব যার সঙ্গীত আজও আমাদের জীবনকে আনন্দময় করে তুলছে।