সিবিআই আর কেজরিওয়াল




গতকাল আচমকা সিবিআইয়ের দল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দপ্তরে হানা দেয়। অভিযোগ, কেজরিওয়ালের সবচেয়ে বিশ্বস্ত অফিসারদের একজন, বিজয় নয়ার, সেই অফিসার যিনি গত বছর দিল্লি মদের নীতি ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে বিদেশি লাইসেন্সহীন অস্ত্র জমা করার অভিযোগ ওঠে। অবশ্য কেজরিওয়াল দাবি করেছেন যে সিবিআইয়ের তল্লাশি নিছক তাঁকে হেয় করার চেষ্টা। এই ঘটনার পর রাজনৈতিক চক্রে জল্পনা চলছে যে সিবিআই-এর তল্লাশি দিল্লির সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা।
সিবিআইয়ের এই তল্লাশি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের রাজনৈতিক কর্মজীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ের মধ্যে এসেছে। গত কয়েক মাস ধরেই বিরোধী দলগুলি তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ তুলে আসছে। মদের নীতি নিয়ে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, শিক্ষামন্ত্রী মনীষ সিসোদিয়ার বিরুদ্ধে আবগারী নীতি কেলেঙ্কারির অভিযোগ। কেজরিওয়ালের নিজের বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এতগুলি অভিযোগের পর দিল্লির রাজনৈতিক পরিস্থিতিও অস্থির হয়ে উঠেছে। বিরোধী দলগুলি কেজরিওয়ালকে পদত্যাগ করার দাবি জানিয়েছে। কিন্তু কেজরিওয়াল এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন যে তিনি তার পদে থেকে লড়বেন।
সিবিআইয়ের এই তল্লাশি দিল্লির রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করে দিয়েছে। বিরোধী দলগুলি এই ঘটনাকে নিজেদের অস্ত্র বানিয়ে কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে আরও জোরেশোরে হামলা শানাচ্ছে। কেজরিওয়ালের দল এই অভিযোগকে অস্বীকার করছে এবং দাবি করছে যে এই তল্লাশি কেবল কেজরিওয়ালকে হেয় করার চেষ্টা।
এখন দেখার বিষয়, সিবিআইয়ের এই তল্লাশি দিল্লির সরকারকে অস্থিতিশীল করে তুলবে কিনা। যদি সিবিআই কেজরিওয়াল বা তাঁর সহকর্মীদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়, তাহলে তা দিল্লির রাজ্য সরকারের জন্য একটি বড় বিপর্যয় হবে। তবে যদি সিবিআই এমন কোনো প্রমাণ খুঁজে না পায়, তাহলে তা কেজরিওয়াল এবং তাঁর দলের জন্য একটি বড় বিজয় হবে।

কেজরিওয়ালের সাথে সাক্ষাতকার

সিবিআইয়ের তল্লাশির পর অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে একটি সাক্ষাত্কার।
প্রশ্ন: স্যার, সিবিআই আপনার দপ্তরে হানা দিয়েছে। আপনি কি এই তল্লাশি কেবল আপনাকে হেয় করার চেষ্টা বলে মনে করেন?
কেজরিওয়াল: হ্যাঁ, এই তল্লাশি অবশ্যই আমাকে হেয় করার একটি চেষ্টা। আমি মনে করি না সিবিআইয়ের কাছে আমার বা আমার কোনো সহকর্মীর বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ রয়েছে। এটি কেবল আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার একটি চেষ্টা।
প্রশ্ন: বিরোধী দলগুলি আপনার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে। আপনি কী তাদের দাবি মেনে নিবেন?
কেজরিওয়াল: না, আমি পদত্যাগ করব না। আমি আমার পদে থেকে লড়ব। আমি কিছুই ভুল করিনি। আমি আমার কাজ চালিয়ে যাব এবং দিল্লির মানুষকে আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ দিব।
প্রশ্ন: আপনি মনে করেন এই তল্লাশির ফলে দিল্লির রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে?
কেজরিওয়াল: আমি মনে করি না এই তল্লাশির ফলে দিল্লির রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠবে। দিল্লির মানুষ জানে যে এই সব অভিযোগ মিথ্যা। আমরা একটি নির্বাচিত সরকার এবং আমরা জনগণের জন্য কাজ করব।

জনগণের প্রতিক্রিয়া

সিবিআইয়ের তল্লাশির পর দিল্লির জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে এই তল্লাশি সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের অংশ। কিছু লোক মনে করেন যে এই তল্লাশি হল সরকারকে অস্থিতিশীল করার একটি চেষ্টা।
সুমিতা দেওয়ান (32 বছর, শিক্ষক): আমি মনে করি সিবিআইয়ের এই তল্লাশি দিল্লি সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের অংশ। আমি আশা করি তদন্তের ফলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সঞ্জীব রানা (45 বছর, ব্যবসায়ী): আমি মনে করি সিবিআইয়ের এই তল্লাশি হল দিল্লি সরকারকে অস্থিতিশীল করার একটি চেষ্টা। সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের জন্য এই তল্লাশি প্রয়োজনীয় নয়।

ভবিষ্যতের পথ

দিল্লি সরকারের জন্য সিবিআইয়ের এই তল্লাশি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যদি সিবিআই কেজরিওয়াল বা তাঁর সহকর্মীদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়, তাহলে তা দিল্লি রাজ্য সরকারের জন্য একটি বড় বিপর্যয় হবে। তবে যদি সিবিআই এমন কোনো প্রমাণ খুঁজে না পায়, তাহলে তা কেজরিওয়াল এবং তাঁর দলের জন্য একটি বড় বিজয় হবে।
সিবি