সংবিধান দিবস




আমাদের দেশের প্রত্যেক রাজনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক ও আইনগত কার্যকলাপের ভিত্তি হল আমাদের সংবিধান। কারণ, সংবিধান হলো সেই নীল নকশা যার ভিত্তিতে আমাদের দেশের সমস্ত বিধি, আইন এবং কর্তৃত্ব বিন্যাস করা হয়। তাই এটিকে আমাদের "সমাজের বাইবেল" বলা হয়। সংবিধান পালন করা আমাদের সবার পবিত্র দায়িত্ব।
সমগ্র বিশ্বের মানুষের মানবাধিকার রক্ষায় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে 10 ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। অতএব বাংলাদেশেও আইনত এদিনই পালিত হয় মানবাধিকার দিবস।
প্রতি বছর আমাদের দেশে 16 নভেম্বর কালো দিবস হিসাবে স্মরণ করা হয়। দিনটিতে দেশের মুক্তিযুদ্ধে অসহযোগী, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী, রাজাকার এবং অপরাধীদের বিচারের দাবিতে এই দিবসটি পালন করা হয়। বর্তমান সরকার ২০১৩ সাল থেকে ১৬ নভেম্বরকে জাতীয় কালো দিবস হিসাবে ঘোষণা করেছে।
এই ঘটনাটি আরও বিস্তারিতভাবে বলা যায়, সবার আগে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মেজর জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী তার বই 'অন ফিশারম্যানস আইল্যান্ড' নামে একটি বই লিখেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ নভেম্বর অসমাপ্ত রচনা অবস্থায় বইটির প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়। এই বইতে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কিভাবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণের পরও হত্যা করা হয়েছিল তার বিস্তারিত বিবরণ দেন।
বইটি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করলে এর কিছু দিন পর ১৬ নভেম্বর তারিখে নিরাপত্তা বাহিনী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বইটির সমস্ত কপি জব্দ করে। বাজার থেকে বইটি নিষিদ্ধ করা হয় এবং আতাউল গনি ওসমানীকে গ্রেফতার করা হয়। তবে জনগণের তীব্র প্রতিবাদ এবং আন্তর্জাতিক চাপের কারণে সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
কিন্তু এই ঘটনার পর থেকেই ১৬ নভেম্বর তারিখটি 'কালো দিবস' হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠে। প্রতিবছর এই দিনে রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন স্মৃতিসভা, প্রতিবাদ সভা ও মিছিলের আয়োজনের মাধ্যমে এই দিবসটি পালন করে। এই দিবসটির মূল লক্ষ্য হলো স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মত্যাগ স্মরণ করা এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগীদের বিচার দাবি করা।