সমাধান সহজ হল কি?




রামনার বীর শুধু সদন নয়, হাইকোর্টসহ পুরো বিচার বিভাগেরও অন্তরাত্মা। এতদিন এখানে বসে দেশ-বিদেশের সবধরনের খুন, ডাকাতি, দুর্নীতি, শাসকদের জুলুম, শোষণ, ভোগ-বিলাস, দুর্নীতির মামলা শুনে পদত্যাগ করেছেন অনেক বিচারক, যাজক। কিন্তু এই সরকারের দুর্নীতির মামলা শুনে তো আর পদত্যাগ করার নয়, বরং পদোন্নতির পর পদোন্নতি পেয়েছেন এখানকার কিছু বিচারক। বিচার বিভাগের এই দুর্বলতার কারণে সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সুষ্ঠু বিচার চাওয়া অসম্ভব। যদিও বিচার বিভাগের সদস্য এবং দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের পর থেকে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকার কারণে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
বীর শুধু সদনের বর্তমান সচিব হিসেবে তার অন্তরাত্মা টান টান করে বলেছেন, আমাদের বিচার বিভাগের শোভা বর্তমান প্রধান বিচারপতি। তাঁর নিরপেক্ষতা, সততা, সাহস ও যোগ্যতা নিয়ে কারও কোনো প্রশ্ন নেই। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তাঁর দৃঢ়তা নিয়েও কারও দ্বিমত নেই। কিন্তু তিনি কি এক্স-চিফের মতো হয়েছেন? তাহলে বিচার বিভাগের প্রশ্নের উত্তর কী? তাহলে সমাধান সহজ হল কি?
বিচারকদের সততা, নিরপেক্ষতা ও সাহসের কথা বেমালুম অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু এসবের যথেষ্ট নয়। আইনজীবীদের কাছেও আইন ভাঙার ক্ষেত্রে কোনো দায় নেই। বিশেষ করে কারাগারে ডাকাতির সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা আইনজীবী হয়ে আদালতে কাজ করছেন। তারা এমন একটি পেশার সঙ্গে জড়িত চালিয়ে নেওয়ার অনুমতি পাচ্ছেন, যে পেশা দুর্নীতি ও অপরাধ প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এদের নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে আইনের শাসন কায়েম করা দুরূহ। আইনজীবীরা যদি এই আইন বানানোর ব্যাপারে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে হাত মেলান, তখন তো রামনার বীর শুধু সদনকে কারাগারেও সরিয়ে নিতে পারবে।
বর্তমান প্রধান বিচারপতি কালের দাবি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কিন্তু তাঁকে অবশ্যই একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। প্রধান বিচারপতি হিসেবে তিনি কোনো রাজনীতি বা সংগঠনের সদস্য নন, তিনি একজন বিচারপতি। তিনি যেন দলীয় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে মিলে মিশে তাঁকে যে বিচারের বিবেকবান হিসেবে মনে হয় না।
আদালতের রায় এবং সরকারের আইন প্রয়োগের মধ্যে সংগতি না থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার প্রশ্ন দেখা দেবে। আর অস্বীকার করে লাভ নেই আজ ক্ষমতাসীনদের কাছে স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার কোনো মূল্য নেই। তাই তাঁদের সামনে কাঁদলে আদালতের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার সমস্যা সমাধান হবে না।
আমাদের বিশ্বাস আদালতের স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষতার জন্য কিছু সংস্কারের মাধ্যমে বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করতে হবে। আদালতের আদেশ এবং সরকারের আইন প্রয়োগের মধ্যে সংগতি রক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন এবং নতুন আইন প্রণয়ন এবং বিচারকদের সততা, নিরপেক্ষতা ও সাহস এবং আইনজীবীদের পেশাগত নৈতিকতা এবং স্ব-নিরীক্ষণ শক্তিশালী করা
এই পরামর্শের যথাযথ বাস্তবায়ন করতে পারলে আজকে বিচার বিভাগের যে সঙ্কট চলছে, তা অনেকটাই দূর হবে।