আমাদের জাতীয় পরিচয়ের প্রকৃতি কি? এটি কি শুধুমাত্র জন্মস্থান, না ভাষা, সংস্কৃতি বা রাজনৈতিক সহযোগিতার বিষয়? সরবজিৎ সিংহের জীবনগাথা এই প্রশ্নগুলোর জটিলতা তুলে ধরে, একজন ব্যক্তির জাতীয় সংশ্লিষ্টতা তার স্থানের সীমানা ছাড়িয়ে যায়।
সরবজিৎ সিংহ ১৯৬৩ সালে ভারতের পাঞ্জাবের ভিকোওয়ালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন চাষক ছিলেন এবং দু'টি সন্তানের পিতা। ১৯৯০ সালে, তাকে অবৈধভাবে পাকিস্তানে প্রবেশ করার অভিযোগে আটক করা হয়।
আত্মীয়দের ভন্ডুল জীবনপাকিস্তানের একটি কারাগারে সরবজিৎ সিংহের দীর্ঘ কারাদণ্ডের সময়টি তার পরিবারের জন্য এক ভয়ঙ্কর সময় ছিল। কাঁটাতারের বেড়ার অন্য দিকে তাদের প্রিয়জনের দুর্দশা সম্পর্কে নিশ্চিত বার্তা পেতে তারা হন্যে হয়ে ঘুরছিল। তারা বারবার আবেদন করেও পাকিস্তান সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি।
সরবজিৎ সিংহের ভাই দলবীর সিংহ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী। তিনি তার ভাইকে মুক্ত করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, ভারতীয় সরকারের কাছে আবেদন করেছেন, পাকিস্তানে ভ্রমণ করেছেন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিকে সাহায্যের জন্য অনুরোধ করেছেন।
জাতীয় সংশ্লিষ্টতার বিরোধসরবজিৎ সিংহের মামলা জাতীয় সংশ্লিষ্টতার বিষয়েও প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। যদিও তিনি ভারতে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং বেড়ে উঠেছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানে বসবাস করছিলেন। তার স্ত্রী এবং সন্তানরাও পাকিস্তানি নাগরিক। কিছু লোক যুক্তি দিয়েছেন যে তার জাতীয় সংশ্লিষ্টতা পাকিস্তানের সাথে, যেখানে অন্যরা বিশ্বাস করেন যে তার ভারতীয় শিকড়কে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।
অবশেষে, ১৯৯৯ সালে সরবাজিত সিংহকে দু'জন বাস যাত্রীকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সিদ্ধান্তটি ভারতজুড়ে বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদ সৃষ্টি করে। ভারতীয় কর্মকর্তারা যুক্তি দিয়েছিলেন যে সরবজিৎ সিংহ নিরপরাধ এবং রাজনৈতিক কারণে তাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
একটি মর্মান্তিক সমাপ্তি২০১৩ সালের ২ এপ্রিল, সরবজিৎ সিংহকে লাহোরের কোট লাখপত কারাগারে ফাঁসি দেওয়া হয়। তার মৃত্যু ভারত এবং পাকিস্তান উভয় দেশেই শোক এবং বিক্ষোভের সৃষ্টি করে।
বিস্তৃত প্রভাবসরবজিৎ সিংহের গল্প শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির গল্প নয়, এটি ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের জটিলতার একটি অনুস্মারক। এটি আমাদের এই প্রশ্নটির উপর মূল্যবান দৃষ্টিভঙ্গি দেয় যে কোন দেশ জাতীয় পরিচয়কে নির্ধারণ করে।
মানবিক প্রতিক্রিয়াব্যক্তিগতভাবে, আমি সরবজিৎ সিংহের গল্প দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছি। আমি কল্পনা করতে পারি না যে কীভাবে তিনি এবং তার পরিবার কারাগারে তার দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষার সাথে মানিয়ে নিয়েছিলেন। আমি বিশ্বাস করি যে প্রত্যেকেরই সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে, এবং আমি আশা করি যে একদিন ভারত এবং পাকিস্তান এমন একটি সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হবে যেখানে নির্দোষ মানুষদের জাতীয় সীমানার কারণে আর কষ্ট ভোগ করতে হবে না।