সেরা অল-রাউন্ডার ডেভিড মিলার
আজকাল ক্রিকেট যেন শুধু বল আর ব্যাটের খেলা নয়। এটা এক অ্যাডভেঞ্চার, এক সাহসিকতা। কে কত বড় শট খেলতে পারবে, কে কত জোরে বল করতে পারবে, কে কত দূর থেকে ছুঁড়ে ফিল্ড করতে পারবে, কে কত দ্রুত দৌড়াতে পারবে। এসবের প্রতিযোগিতায় নিজেকে প্রমাণ করার মতো এমন কিছু ক্রিকেটার আছে, যাদের গতি, সহিষ্ণুতা, কায়দা-কানুন সবই আলাদা। আর সেই তালিকায় অন্যতম সেরা হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অল-রাউন্ডার ডেভিড মিলার।
ডেভিড মিলারের ক্রিকেটে প্রথম প্রদর্শনটাও ছিল বেশ রোমাঞ্চকর। ২০১০ সালে নিজের দেশের হয়ে অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছিল তার দল। সেখানে তার ব্যাটিং স্ট্রাইকরেট ছিল ১৫৭.৮৯। সেই প্রতিভা দেখে আইপিএল ফ্রাঞ্চাইজি কেএলআরডি কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব তাকে দলে টেনে নিয়ে এসেছিল। সেখান থেকে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরু। এরপর থেকে কেএলআরডি, কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব, রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে ৮৭টি ম্যাচ খেলেছেন। প্রায়ই শেষ ওভারে দলকে জেতানোর মতো কঠিন পরিস্থিতিতে তাকে খেলতে দেখা গেছে। এমনিতে তো তিনি একটা বেশ সিনিয়র প্লেয়ার, কিন্তু মাঠে দেখলে মনে হবে কেউ যেন নতুন। সেই তেজ তো আছেই, সেই উত্তেজনাও আছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার এই ক্রিকেটারের জন্য আইপিএলে এই বছরটা ছিল বেশ ভালো। গুজরাট টাইটান্সের হয়ে ১৬ ম্যাচে তিনি ৪৮১ রান করেছেন। তার স্ট্রাইক রেট ছিল ১৪২.৭৩। তিনি তিনটি হাফ সেঞ্চুরিও করেছেন। তবে শুধু আইপিএলেই নয়, ব্যাট হাতে দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সিতেও তার পারফর্ম্যান্স বেশ দারুণ। তিনি ১৪৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ৩৯ অর্ধ-শতক সহ মোট ২৫১৯ রান করেছেন। তার ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট ১৪৩.৯২। এছাড়াও তিনি ৬৮টি ওয়ানডে ম্যাচে ২৩ রান সহ মোট ৩৩৯৮ রান করেছেন। তার ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট ৯২.৩। ব্যাটিং ছাড়াও তিনি দক্ষ এক বোলার। টি-টোয়েন্টিতে তিনি বল হাতে নিয়ে ১১৪টি উইকেট নিয়েছেন। একটি ওয়ানডে ম্যাচে একটাই উইকেট নিয়েছেন।
ডি মিলারের ক্যারিয়ার জুড়েই তার পরিশ্রম, খেলা প্রতি শ্রদ্ধা, বিশ্বাস এবং নিজের দলের প্রতি আস্থার পরিচয় মিলেছে। তিনি যখন ব্যাটিং ক্রিজে নামেন, তখন তার ব্যাটটি নিয়ে কী করা যায় সেটা নিয়ে তিনি সঠিক জানেন। টি-টোয়েন্টিতে দ্রুত রান তোলার জন্য দলগুলোর প্রথম পছন্দ তিনি। মাঠের বাইরেও তিনি একজন সহজ-সরল মানুষ। তার ব্যক্তিত্বও বেশ ক্যাজুয়াল। নিজের খেলার প্রতি তিনি খুব বেশি সিরিয়াস নন। মাঠে নামার আগে তিনি তার সাথীদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা করতে ভালোবাসেন। মাঠে নামলেও নিজের খেলা উপভোগ করেন তিনি।
ক্রিকেট ম্যাচের সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্তটা হল, শেষ ওভার। শুধু শুধু আমরা ক্রিকেট পছন্দ করি, তা নয়। আসল ক্রিকেট প্রেমীরা সেই শেষ ওভারের মুহূর্তটার জন্যই অপেক্ষা করে থাকেন। কারণ সেখানেই দুই দলের মধ্যে লড়াইটা সবচেয়ে বেশি। সেই উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়, যখন সেই ওভারটা করেন ডেভিড মিলার। সব ধরনের বোলিং করতে পারার ক্ষমতা আছে তার। মিডল ওভারে অফ ব্রেক থেকে শুরু করে শেষ ওভারে ফুল ও দীর্ঘতম হাইপারে উঠে যেতে পারেন।
গত বিশ্বকাপের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে চোট পেয়ে টুর্নামেন্টের মধ্যেই দেশে ফিরে আসতে হয় ডেভিড মিলারকে। কিন্তু এবার তাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট প্রেমীরা। তারা আশা করছেন, এই অল-রাউন্ডারকে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সিতে খুব দ্রুতই আবার মাঠে দেখা যাবে।