সুরের সাম্রাজ্যের এক অনন্য নক্ষত্রের নাম রাহাত ফতেহ আলী খান। তার গানে আছে জাদুকরী মায়া, মনকে স্পর্শ করার অসাধারণ ক্ষমতা। তার কণ্ঠ থেকে নির্গত সুরে আছে মনোযোগের শক্তি, যা শ্রোতাকে মুগ্ধ করে রাখে।
রাহাত ফতেহ আলী খানের জন্ম ১৯ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের ফয়সলাবাদে। তিনি বিখ্যাত কাওয়ালী গায়ক ফরিদ আয়াজের নাতি। তাই ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের পরিবেশে বেড়ে ওঠেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি পেশাদারভাবে কাওয়ালী গাইতে শুরু করেন।
তীরানব্বই দশকের প্রথম দিকে তার ক্যারিয়ারে একটি বড় মোড় ঘোরে। বলিউডের বিখ্যাত সুরকার নুসরত ফতেহ আলী খানের সঙ্গে তার দেখা হয়। নুসরতের পৃষ্ঠপোষকতায় রাহাত বেশ কয়েকটি বলিউড ছবিতে গান গান। "প্যায়ার কে সাথ দো" ছবির "মানো ইয়া না মানো" গানটিই তার প্রথম বড় সফলতা।
রাহাত ফতেহ আলী খান শুধু বলিউডে নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় কাওয়ালী সম্রাট হিসেবে পরিচিত। তার কণ্ঠের আবেগপূর্ণ সুর, দুর্দান্ত স্বর পরিসর এবং তীব্র আবেদন তাকে অন্য সকলের থেকে আলাদা করে রেখেছে।
রাহাতের কাওয়ালী গানে আধ্যাত্মিকতা, ভক্তি এবং প্রেমের বিষয়বস্তু থাকে। তিনি সুফি কবিদের কবিতা গেয়ে থাকেন, যা শ্রোতাদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।
কাওয়ালীর মাধ্যমে রাহাত ফতেহ আলী খান পাকিস্তানি সংস্কৃতিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি ভারত, বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সফলভাবে সফর করেছেন।
তার গান শুধু মুসলিম শ্রোতাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ তার গানকে উপভোগ করেন। তার সুরে আছে সার্বজনীনতা, যা সকলের হৃদয়ে স্পর্শ করে।
রাহাত ফতেহ আলী খানের সঙ্গে আমার একটি বিশেষ স্মৃতি আছে। একবার তার একটি কনসার্টে গিয়েছিলাম। কনসার্ট হলটি ছিল ভর্তি। যখন রাহাত মঞ্চে এলেন, তখন সারা হল গর্জে উঠলো।
তিনি "মানো ইয়া না মানো" গানটি গাইতে শুরু করলেন। তার কণ্ঠ থেকে নির্গত সুরে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। এটি যেন আমার আত্মাকে স্পর্শ করলো। সেদিনের কনসার্ট আমার জীবনের একটি অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে রয়েছে।
রাহাত ফতেহ আলী খান পাকিস্তানি সঙ্গীতের ইতিহাসে একজন কিংবদন্তি। তার গানে আছে সত্যিকারের ম্যাজিক, যা শ্রোতাদের হৃদয়ে সবসময়ই বেঁচে থাকবে।
তার গানের উত্তরাধিকার ভবিষ্যতের প্রজন্মের সংগীতজ্ঞ ও শ্রোতাদের অনুপ্রাণিত করে চলবে। তার সুরে আছে কালজয়ী মূল্য, যা আগামী বহু বছর ধরে মানুষকে মুগ্ধ করবে।