সুশীল মোদি: এক যুগের সাক্ষী, বিহারের রাজনীতির লাইফলাইন




বিহারের রাজনীতির ইতিহাসে সুশীল মোদি একটি অবিস্মরণীয় নাম। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিদৃশ্যে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রহরী হয়ে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করলেও সেই সব পদে তার মোক্ষম দক্ষতা ও স্পষ্টবাদিতা তাকে সবার চোখে বিশ্বস্ত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
সুশীল মোদি ১৯৫২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বিহারের সিওয়ান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। সমাজকর্মী বাবা এবং শিক্ষিকা মা-র ঘরে জন্ম নেওয়া সুশীল মোদির শৈশব কেটেছে গ্রামের সাদাসিধা পরিবেশে। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির প্রতি তার অভিরুচি ছিল। সিন্দ্রিয়া কলেজে পড়ার সময়ই সক্রিয় রাজনীতিতে পা রাখেন তিনি।
১৯৭৭ সালে জয়প্রকাশ নারায়ণের সর্বোদয় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় সুশীল মোদির রাজনৈতিক জীবন। ১৯৮০ সালে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে তার যোগাযোগ ঘটে। এরপর ১৯৮৫ সালে তিনি দলের রাজ্য সভাপতি নির্বাচিত হন। সেই সময় তিনি বিহার বিধানসভার সদস্যও ছিলেন।
১৯৯০ সালে সুশীল মোদি প্রথমবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। যদিও তা মাত্র মাস তিনেকের জন্য ছিল। এরপর ২০০৫ সালে তিনি আবার মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসেন। এবার তার মেয়াদ ছিল পুরো পাঁচ বছর। এই সময়ে বিহারে উন্নয়নের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। রাজ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে। সুশীল মোদির নেতৃত্বে বিহার দেশের বাকি রাজ্যের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পায়।
২০১০ সালে সুশীল মোদি বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি এই পদে ছিলেন ২০১৭ সাল পর্যন্ত। এই সময়ও তিনি রাজ্যের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাজ্যের আর্থিক শৃঙ্খলা রক্ষা করেছেন।
সুশীল মোদি সবসময় একটি পরিষ্কার এবং দুর্নীতিমুক্ত রাজনীতির পক্ষে কথা বলে এসেছেন। তিনি বিহারে জঙ্গলরাজের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সোচ্চার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার স্পষ্টবাদী মনোভাব এবং অবিচল নৈতিকতা তাকে বিহারের মানুষের কাছে বিশ্বস্ত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
সুশীল মোদি ইতিমধ্যেই বিহার রাজনীতিতে ৪০ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন। এই সময়ে তিনি বিভিন্ন প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে সর্বদা রাজ্যের উন্নয়নের জন্য কাজ করে গেছেন। তিনি আজও বিহারের রাজনৈতিক পরিদৃশ্যে একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তার অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং আদর্শবাদ বিহারকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিঃসন্দেহে একটি অমূল্য সম্পদ।
  • দৃঢ় নেতৃত্ব: সুশীল মোদি নিজের দৃঢ় নেতৃত্বের জন্য পরিচিত। তিনি সবসময় কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে এবং তা বাস্তবায়ন করতে দ্বিধা বোধ করেন না। এই গুণটি বিহারকে জঙ্গলরাজ থেকে মুক্ত করতে এবং রাজ্যে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছে।
  • পরিচ্ছন্ন রাজনীতি: সুশীল মোদি বিহারের রাজনীতিতে পরিচ্ছন্নতার প্রতীক। দীর্ঘ কেরিয়ারের পরেও তার নামে কোনও কলঙ্ক নেই। তিনি সবসময় দুর্নীতি এবং ভ্রষ্টাচারের বিরুদ্ধে কথা বলে এসেছেন এবং বিহারকে একটি দুর্নীতিমুক্ত রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে সংকল্পবদ্ধ।
  • অর্থনৈতিক উন্নয়ন: সুশীল মোদি বিহারের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাজ্যের আর্থিক শৃঙ্খলা রক্ষা করেছেন এবং বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ব্যবসায়বান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছেন। এর ফলে বিহারে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।
  • সামাজিক উন্নতি: সুশীল মোদির শাসনামলে বিহারে সামাজিক উন্নতিরও লক্ষণীয় উন্নতি ঘটেছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অবকাঠামোর উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর ফলে রাজ্যের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে এবং বিহারের মানুষের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে।
আজ, সুশীল মোদি বিহার রাজনীতির একটি লাইফলাইন। তার অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং আদর্শবাদ তাকে বিহারের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে। যতদিন তিনি রাজনীতিতে থাকবেন, ততদিন বিহারের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা জ্বলজ্বল করে জ্বলবে।