সাহিত্যের আখড়া – বদাউঁ
গোলাম মহিউদ্দিন
বদাউঁ শহরটি উত্তর প্রদেশের রাজধানী লখনউ থেকে প্রায় ২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি একটি প্রাচীন শহর, যার ইতিহাস প্রায় ১৫০০ বছরেরও বেশি পুরানো বলে মনে করা হয়। বদাউঁ তেলিবাজার এলাকায় অবস্থিত হযরত শাহ আবুল বাগ খান্দারীর দরগাহ বা আলী-মোহাম্মদ মসজিদ এর স্থাপত্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের কারণে ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ সরকার এটিকে সুরক্ষিত স্থান হিসেবে ঘোষণা করে।
বদাউঁ শহরটির আর একটি গৌরব হলো সাহিত্য। এই শহরটিতে বহু বিখ্যাত কবি, লেখক এবং সাহিত্যিক জন্মগ্রহণ করেছেন। হিন্দি সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি মহাভারতী অর্থাৎ শ্রী বিজয় গোপাল শর্মা ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে বদাউঁ শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি প্রায় ১০০টি গ্রন্থ লিখেছেন, যার মধ্যে ৩০টিরও বেশি কাব্যগ্রন্থ রয়েছে। তাঁর কবিতা নসরুদ্দিন হোজার কাহিনীগুলির জন্য বিখ্যাত, যা সারাদেশে খুবই জনপ্রিয়।
এর পরেই আসে হিন্দি সাহিত্যের আর একজন বিশিষ্ট কবি 'ঠাকুর অনিগোল' বা 'খুরশিদ সাহেব'। তিনি বদাউঁ শহরের একটি অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী এবং তাঁর কবিতায় প্রকৃতির অসাধারণ বর্ণনা পাওয়া যায়। তাঁর কবিতার মধ্যে 'গঙ্গা গীতা' কাব্যগ্রন্থটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।
এছাড়াও বদাউঁ শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন উর্দু সাহিত্যের বিখ্যাত কবি মির বদল হুসাইন খাত্রি, যিনি 'জান আরা' উপন্যাসের লেখক হিসেবে বিখ্যাত। এই উপন্যাসটি উর্দু সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হিসেবে গণ্য করা হয়।
বদাউঁ শহরের সাহিত্যিক ঐতিহ্য অব্যাহত রয়েছে আজও। শহরটিতে বেশ কয়েকটি সাহিত্যিক সমিতি এবং সংস্থা রয়েছে যা সাহিত্যিক অনুষ্ঠান এবং আলোচনা সভা आयোজন করে থাকে। এছাড়া শহরে বেশ কয়েকটি পুস্তকালয়ও রয়েছে, যেখানে সাহিত্যের ছাত্রদের ও গবেষকদের জন্য প্রচুর সংগ্রহ রয়েছে।
বদাউঁ শহরের সাহিত্যিক ঐতিহ্যটি শুধুমাত্র ভারতের জন্যই গর্বের বিষয় নয়, বরং এটি বিশ্ব সাহিত্যেরও একটি অমূল্য সম্পদ। এই শহরটি ভবিষ্যতেও সাহিত্যের আখড়া হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে আশা করা যায়।