সায়েজ কিংবা রাঙ্কি, কে নামকরণের পেছনে লুকিয়ে রয়েছে?''




সায়েজ, রাঙ্কি, ম্যাগি, লিচু। এই সব নামগুলোর সঙ্গে আমাদের মেলানোর অদ্ভুত এক ইতিহাস রয়েছে। কখনো স্নেহের আদরের মানুষ, কখনোবা আবার একটি ডাকেই ছুটে আসা প্রিয় পোষ্য। সেক্ষেত্রে "সায়েজ, রাঙ্কি" দুটি নামের জায়গা অনেকটাই আলাদা।

খেলাধুলা কি শুধুমাত্র মাঠের ভেতরই সীমাবদ্ধ? অনেকেই বলেন খেলাধুলার ক্ষেত্রে একটা মানসিক প্রস্তুতির সঙ্গে শারীরিক প্রস্তুতিটাও অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে, বিশেষত ব্যাডমিন্টন খেলাটার ক্ষেত্রে খেলোয়াড়ের পারিবারিক, সামাজিক অবস্থানও অনেকটা ভূমিকা রাখে। ঠিক তেমনিভাবেই, খেলাধুলার ক্ষেত্রে "নামকরণ" এর বিষয়টিও অনেকটা গুরুত্ব বহন করে।

আর যদি সেই খেলাটি ব্যাডমিন্টন হয় এবং খেলোয়াড়ের নাম হয় "সায়েজ" কিংবা "রাঙ্কি", তাহলে চর্চা, আলোচনার শেষ নেই। অনেকেই "সায়েজকে" বলেন "রাঙ্কি', আবার অনেকেই "রাঙ্কিকে" ডাকেন "সায়েজ"। এই দুটি নামের মধ্যে বিভ্রান্তিটা কেন, এই প্রশ্নের উত্তর জানতে গেলে আমাদের সফর করতে হবে প্রায় এক দশক আগের দিকে।

২০১২ অলিম্পিক। সেবার এই বিশ্বমঞ্চে যারা ভারতের হয়ে দ্বার রক্ষা করেছিল, তাদের মধ্যে ছিলেন সায়েজ রাঙ্কি রেড্ডি। এই আসরের পর থেকেই তাকে "সায়েজ" নামেই ডাকা হতে শুরু করে। ব্যাডমিন্টন বিশ্বে "সায়েজ" নামে চেনা হলেও আসলে তার নাম সায়েজ রাঙ্কি রেড্ডি। ছোটবেলায় দাদু তাকে 'সায়েজ' নামটি দিয়েছিলেন। অর্থাৎ, "রাঙ্কি" তার মূল নাম নয়।

মহীশূরের পাখল নামের একটি শহরে জন্ম এই ভারতীয় ব্যডমিন্টন তারকার। হায়দরাবাদে এই যুবক তাঁর ব্যাডমিন্টন কেরিয়ার শুরু করেছিলেন। ২০১৭ সালে, সায়েজ এবং চিরাগ শেট্টি জার্মান ওপেন জিতেছিলেন। এটি একটি বিশ্ব ট্যুর সুপার 300 টুর্নামেন্ট। এরই মধ্যে, তিনি অনেক বড় খেলায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে অলিম্পিক, কমনওয়েলথ গেমস এবং এশিয়ান গেমস।

আর এবার আসা যাক রাঙ্কির কথায়। মহারাষ্ট্রের হিঙ্গোলি জেলায় একটা শহর আছে, পারভানি। আর সেই শহরে সায়েজের মতোই এক জায়গার ছেলে, লাক্ষ্য সেন। অনেকটা সায়েজের মতোই লাক্ষ্যেরও নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল একটা ডাকনাম। আর সেই ডাকনামটিই হল "রাঙ্কি"। জানতে আগ্রহ হচ্ছে কীভাবে? চলুন জেনে নেওয়া যাক।

ছেলেবেলা থেকেই লাক্ষ্যর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ অনেকটা সায়রাস পুনলেকার মতো ছিল। সায়রাস পুনলেকার ডাকনাম ছিল 'রাঙ্কি'। সেই কারণে লাক্ষ্যর কাছের মানুষেরা এবং কোচিং স্টাফ তাকেও 'রাঙ্কি' ডাকতে শুরু করে। পরবর্তীকালে তার নামের সঙ্গে এই ডাকনামটি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে, ব্যাডমিন্টন জগতে তাকে আজও 'রাঙ্কি' নামেই চেনেন সকলে।

এখানেই শেষ নয়। ব্যাডমিন্টন জগতে এই দুই "রাঙ্কি"র মিল এবং অমিলের কাহিনী চলতেই থাকে। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত থাইল্যান্ড ওপেন ২০১৯-এর প্রথম রাউন্ডে সায়েজ রাঙ্কি রেড্ডি ও চিরাগ শেঠিকে বিপরীতে পেয়েছিলেন লাক্ষ্য সেন ও তার জুটিদার সাত্বিকসাইরাজ র‍্যাঙ্কিরেড্ডি। সায়েজ ও চিরাগ সেই ম্যাচে সরাসরি সেটে জিতে যান। এরপর আবার ফাইনালেও মুখোমুখি হন এই দুই জুটি। সেদিনও জয়ের মঞ্চে দাঁড়ান সায়েজ আর চিরাগ।

এভাবেই দুটি আলাদা নামের যাত্রা শুরু হলেও, একই পেশা ও অনুরূপ নামের কারণে, আজ "সায়েজ"ও "রাঙ্কি" হয়ে গেছেন। ব্যাডমিন্টনের মাঠে এই দুই "রাঙ্কির" লড়াই ও প্রতিদ্বন্দ্বীতার কাহিনী চলতে থাকবে হয়ত সামনের দিনগুলিতেও। সেটা হয়ত ছোটবেলার স্মৃতি হিসেবে, ডাকনাম হিসেবে, আবার হয়ত পুরস্কারের তালিকায় দুটি নামকে পাশাপাশি রেখে।