সুয়েজ খাল
সুয়েজ খাল একটি কৃত্রিম জলপথ, যা মিশরের মধ্য দিয়ে বিস্তৃত হয়েছে। এটি পোর্ট সাইড থেকে সুয়েজ পর্যন্ত প্রসারিত এবং ভূমধ্যসাগরকে লোহিত সাগরের সাথে সংযুক্ত করে। গভীরতা ও প্রস্থের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জলপথগুলোর মধ্যে একটি এটি।
প্রাচীনকাল থেকেই সুয়েজ অঞ্চলটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট হিসেবে পরিচিত। প্রাচীন মিশরীয়রা নীল নদ এবং লোহিত সাগরের মধ্যে একটি খাল খনন করেছিল, যা প্রায় 2,000 বছর ধরে ব্যবহৃত হয়েছিল। মধ্যযুগে, মুসলিম শাসকগণ খালটি পুনরুদ্ধার করেন এবং এটিকে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করেন।
ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, ফরাসি প্রকৌশলী ফার্দিনান্দ দে লেসেপস সুয়েজ খালের আধুনিক সংস্করণ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। খালটি নির্মাণে প্রায় দশ বছর সময় লাগে এবং 1869 সালে এটি খোলা হয়।
সুয়েজ খাল বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট হয়ে ওঠে। এটি ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে ভ্রমণের সময় এবং খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়। খালটির মাধ্যমে পণ্য পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত জাহাজের আকার এবং সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সুয়েজ খালটি ব্রিটিশদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল, যা অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে তাদের অভিযানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় খালটি আবারও ব্রিটিশ বাহিনীর দ্বারা রক্ষা করা হয়।
1956 সালে, মিশরীয় রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের সুয়েজ খালের জাতীয়করণ ঘোষণা করেন, যা সুয়েজ সংকটে পরিণত হয়। সংকটটি একটি সামরিক সংঘর্ষে পরিণত হয়, যা মিশর, ইসরাইল, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে সংঘটিত হয়। সংকটটি শেষ পর্যন্ত জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সমাধান করা হয় এবং মিশর সুয়েজ খালের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
1967 সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় সুয়েজ খাল বন্ধ হয়ে যায়। খালটি আট বছর পর্যন্ত বন্ধ ছিল, যা বিশ্ব বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যাঘাত ঘটায়। 1975 সালে, খালটি আবার খোলা হয় এবং তখন থেকে এটি অবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে।
সুয়েজ খাল আজও বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট। এটি প্রায় 12% বিশ্বের বাণিজ্যিক জাহাজের পরিবহন করে, যা এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম জলপথগুলির মধ্যে একটি করে তোলে।