হরতালিকা তীজ
তীজের পুজো অাদিম কাল থেকে চলে আসা এক অন্যতম জনপ্রিয় হিন্দু উৎসব। এ উৎসবটি প্রধানত শিব ও পার্বতীর বিবাহ বা মিলন উদযাপন করে। তীজের পুজো ভাদ্র মাসের শুক্লা তৃতীয়া তিথিতে পালন করা হয়। এই বছর হরতালিকা তীজ পালিত হচ্ছে ১৯ আগস্ট, ২০২৩।
হরতালিকা তীজকে নিয়ে নানা কিংবদন্তি আছে। একটি কিংবদন্তি অনুসারে, পর্বতরাজ হিমালয়ের মেয়ে পার্বতী শিবকে স্বামী হিসেবে পেতে কঠোর তপস্যা করেন। তার তপস্যায় খুশি হয়ে শিব তাকে বিয়ে করেন। তাদের বিয়েটি হরতালিকা তীজের দিনে অনুষ্ঠিত হয়। সেই থেকেই এই দিনটিতে হরতালিকা তীজ পালন করা হয়।
আরেকটি কিংবদন্তি অনুসারে, হরতালিকা তীজের দিনে পার্বতী তার বাবার বাড়ি যান। সেখানে তিনি তার বান্ধবীদের সাথে উপবাস রাখেন এবং শিবের পুজো করেন। তাদের পুজোয় খুশি হয়ে শিব পার্বতীকে অমরত্ব দেন। সেই থেকেই এই দিনটিতে মহিলারা উপবাস রাখেন এবং শিব-পার্বতীর পুজো করেন।
হরতালিকা তীজ প্রধানত বিবাহিত মহিলাদের দ্বারা পালন করা হয়। এই দিনে মহিলারা শিব-পার্বতীর পুজো করেন, উপবাস রাখেন এবং গীত-নৃত্যের মাধ্যমে উৎসবটি উদযাপন করেন। হরতালিকা তীজের পুজোয় মহিলারা সাজপোশাক করেন, মেহেদি লাগান এবং ঝুলা গান গেয়ে আনন্দ করেন।
হরতালিকা তীজের সাথে জড়িয়ে আছে নানা আচার-অনুষ্ঠান। এই দিনে মহিলারা স্নান করে শুদ্ধবস্ত্র পরেন। তারপর তারা শিব-পার্বতীর মূর্তি বা ছবির সামনে বসে পুজো করেন। পুজোয় তারা শিব-পার্বতীকে ফুল, ফল, মিষ্টি এবং অন্যান্য উপহার নিবেদন করেন। তারা দেবতাদের ভোগ দেওয়ার জন্য প্রসাদও রান্না করেন।
হরতালিকা তীজের পুজোর সময় মহিলারা উপবাস রাখেন। তারা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছুই খান না। সন্ধ্যায় তারা পুজো শেষ করে প্রসাদ খান। কিছু মহিলা সারা রাত উপবাস রেখে পরদিন সূর্যোদয়ের পরে প্রসাদ খান।
হরতালিকা তীজের পুজোর সময় মহিলারা গীত-নৃত্যের মাধ্যমে উৎসবটি উদযাপন করেন। তারা একসাথে জড়ো হয়ে ঝুলা গান গান এবং নাচগান করেন। ঝুলা গান হল হরতালিকা তীজের সাথে জড়িয়ে থাকা একটি জনপ্রিয় লোকগীতি। এই গানগুলোতে পার্বতী এবং শিবের প্রেম ও বিবাহের কাহিনী বর্ণনা করা হয়।
হরতালিকা তীজ একটি গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু উৎসব। এই উৎসবটি বিবাহিত মহিলাদের দ্বারা তাদের স্বামীর দীর্ঘায়ু ও সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য পালন করা হয়। এই উৎসবটি মহিলাদের নিজেদেরকে সাজিয়ে-গুছিয়ে, সামাজিক মেলামেশা করার এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস প্রকাশ করার একটি সুযোগ দেয়।