হোলি




তোমরা কি সবুজ, নীল, লাল আর গোলাপি রং পাগল হয়ে ছোড়াফোঁড়ার একটা উত্সবের কথা শুনেছো কখনও? তাও আবার বসন্তের আগমনী সূচক একটা উৎসব? যদি না শুনে থাকো তাহলে তোমরা একেবারেই তোমাদের জীবনে একটা দারুণ মজার জিনিস মিস করছো। আর সেটাই হল 'হোলি'।
হোলির ইতিহাসটা বেশ আকর্ষণীয়। প্রাচীন ভারতবর্ষে হিরণ্যকশিপু নামে একটা দানব রাজা ছিল। আর তার একটা শক্তিশালী ছেলে ছিল, যার নাম ছিল প্রহ্লাদ। কিন্তু ব্যাপারটা হল, প্রহ্লাদ তার বাবার দেওয়া দেবতাদের পূজা করত না, বরং সে শুধু বিষ্ণুকেই পূজা করত। এতে হিরণ্যকশিপু খুব দুঃখ পেত এবং সে তার ছেলেকে জোর করে দেবতাদের পূজা করার জন্য নির্যাতন করত। কিন্তু প্রহ্লাদ তবুও তার বিশ্বাস থেকে বিচলিত হয়নি।
হিরণ্যকশিপু একদিন তার বোন হোলিকাকে দিয়ে প্রহ্লাদকে আগুনে ফেলতে বলে। হোলিকা কাছেই বসে থাকে এবং সে নিজে অগ্নি দাহক নামক একটা বিশেষ বস্ত্র পরে যা তাকে আগুন থেকে রক্ষা করত। কিন্তু বিষ্ণু হোলিকাকে শাস্তি দেন এবং তাকে আগুনে পুড়িয়ে দেন। আর তখন থেকেই এই উত্সব হোলিকার স্মৃতির উদ্‌যাপন করার জন্য করা হয়।
হোলির দিনে লোকেরা রঙবেরঙের জল এবং রঙগুলির সঙ্গে খেলা করে। তারা গান গায়, নাচে এবং খুব মজা করে। এমনকি বন্ধু এবং পরিবারের লোকেরাও একে অপরের উপর রঙ মাখে এবং আনন্দ করে। বেশির ভাগ সময়ই লোকেরা রাস্তা কিংবা উদ্যানে হোলি খেলে।
হোলির রঙগুলির পিছনেও কিছু আকর্ষণীয় অর্থ লুকিয়ে আছে। সবুজ রং ফসলের প্রতীক, নীল রং আকাশের প্রতীক, লাল রং ভালবাসা আর শক্তির প্রতীক এবং গোলাপি রং সৌন্দর্যের প্রতীক।
হোলি শুধু একটা রঙবেরঙের জল এবং রঙ খেলার উত্সবই নয়, বরং এটা ভালবাসার, একতার এবং বন্ধুত্বের উত্সবও। এটা সেই সময় যখন সব সংকল্প এবং মনোমালিন্য দূর হয়ে যায়, যখন লোকেরা একে অন্যের সাথে জড়িয়ে থাকে। এটা একটা আত্মশুদ্ধির সময়, এবং বসন্তের আগমনের উত্সবও।
হোলি ভারতবর্ষের সবচেয়ে রঙবেরঙের এবং উদযাপিত উত্সবগুলির মধ্যে অন্যতম। তাই যদি তোমার কখনও ভারতবর্ষে থাকার সুযোগ হয় তাহলে হোলির সময়টায় আসা, এবং সবার সাথে রঙের খেলায় মজা করার অভিজ্ঞতাটা নেওয়ার কথা ভেবে দেখবে। বিশ্বাস করো, তুমি তোমার জীবনে এতটা মজা আর কোনও উত্সবে কখনও পাবেনা।