Bagmati Express: রহস্যরঞ্জন সফরকাহিনী




লেখক: সুপর্ণ অধিকারী

ভূমিকা:
একসময়, যখন ভারত আর বাংলাদেশ ছিল এক অবিভক্ত অঞ্চল, তখন দীর্ঘদিনের দীর্ঘদিন ধরে কলকাতা থেকে দিল্লি যাতায়াতের জন্য মূলত রেলপথই ছিল একমাত্র পথ। একটা সময় ছিল যখন কলকাতা থেকে দিল্লি যাওয়ার জন্য শুধু একটা ট্রেনই চলাচল করতো, সেটি হলো 12577/12578 "বক্সর কি বহু" এক্সপ্রেস। পরে যখন ট্রেনের সংখ্যা বাড়তে থাকে, তখন এই ট্রেনের নাম হয়, "বাগমতী এক্সপ্রেস"। আমার ছোটকালে, কলকাতা থেকে দিল্লি হয়ে আমরা যেখানে যেখানে যাতায়াত করতাম, সেই সব স্থানে যাওয়ার জন্যই সাধারণত "বাগমতী এক্সপ্রেস"ই ছিল আমাদের প্রথম পছন্দ।

সেকালের "বাগমতী এক্সপ্রেস":
আমাদের সেই সময়কার "বাগমতী এক্সপ্রেস" ও আজকের "বাগমতী এক্সপ্রেস" সত্যিই সম্পূর্ণ আলাদা। এখনকার "বাগমতী এক্সপ্রেস" সুপারফাস্ট হলেও, সেই সময় "বাগমতী এক্সপ্রেস" ছিল একটি মেইল এক্সপ্রেস। তখনকার দিনে সুপারফাস্ট ট্রেন বলতে অতি অল্প সংখ্যক কিছু ট্রেনই ছিল। আর সেই সময় কলকাতা-দিল্লি রুটে যাত্রীদের চাহিদা ছিল অত্যন্ত বেশি। তাই "বাগমতী এক্সপ্রেস" অতি অল্পসংখ্যক স্টেশনেই থামতো। কাছেপিঠের কোনো স্টেশনে থামলে পাঁচ মিনিট, আর দূরের কোনো স্টেশনে থামলে দশ মিনিট, அதুক কিছুক্ষণের জন্যই। যার ফলে কলকাতা থেকে দিল্লিতে পৌঁছানোর সময় লাগতো মোটামুটি 24 ঘন্টা। কিংবা তার কিছুটা বেশি।

আগুন আর ভূত নামক দুটি সহযাত্রী:
আমাদের সেই সময়কার "বাগমতী এক্সপ্রেসে" আগুন আর ভূত, এই দুইটি বিষয় সবসময়ই ছিল আমাদের সহযাত্রী। কেননা, প্রায়ই এই ট্রেনে আগুন লাগতো। একবার-দুবার নয়, ছয়-সাতবার। আবার, কখনো সখনো এই ট্রেনকে ভুতুড়ে ট্রেন হিসাবেও অভিহিত করা হতো। কারন, এই ট্রেনে একবার এক ভূত ভ্রমণ করছিলেন বলে শোনা গেছিল। একবার আমাদের একটি রিজার্ভেশন কম্পার্টমেন্টে রাত্রে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। রাতের বেলা কম্পার্টমেন্টে সবাই গভীর ঘুমে মগ্ন। এমন সময়, হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ পাওয়া গেল। একজন যাত্রী হুঁশিয়ার হয়ে দেখলেন, তার কম্পার্টমেন্টে এক অপরিচিত ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন। ঘুমের ঘোর কাটিয়ে একটু আতঙ্কিত হয়েই ওই যাত্রী সেই অপরিচিত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি এখানে কী করছেন। উত্তরে সেই ব্যক্তিটি বললেন, তিনি তো এই কম্পার্টমেন্টের যাত্রী, কিছুক্ষণ আগেই সবে তিনি দিল্লি থেকে উঠেছেন। এই উত্তর তার অন্য সহযাত্রীদের আরও আতঙ্কিত করলো। কারণ, তাদের কম্পার্টমেন্টে দিল্লি থেকে কোনো নতুন যাত্রী ওঠেনি। এটা কী তাহলে ভূতের কোনো খেলা? তাদের সন্দেহটা আর জোরালো হয়ে উঠলো, যখন সেই ব্যক্তি হঠাৎ গায়েব হয়ে গেলেন।

সেকালের মজার স্মৃতি:
প্রসঙ্গত উল্লেখ করা হোক যে, সেই সময় ভারত ও বাংলাদেশ একই দেশ ছিল। সেই সময়কার সীমান্তরেখা এখন আর চোখে পড়ে না। তাই, সেই সময় "বাগমতী এক্সপ্রেস"-এ ভ্রমণের সময় সীমান্ত পার হওয়াটাও একটি বিশেষ ঘটনা হিসাবে বিবেচিত হতো। সবচেয়ে মজার ব্যাপার ছিল, আগে সেই সময় "বাগমতী এক্সপ্রেস" কলকাতা থেকে ছাড়ার পর সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ট্রেনটিকে সীমান্তে থামতে হতো। সীমান্ত পার হওয়ার পর, পুনরায় বি.এস.এফ-এর ফোনডাক পাওয়ার পরই ট্রেনটি সীমান্ত পার হতে পারতো। সেই সময়ে বি.এস.এফ-এর ফোনডাকের জন্য অপেক্ষা করার সময়কে কাজে লাগানোর সবচেয়ে ভালো উপায় ছিল "বাগমতী এক্সপ্রেস"-এ থাকা যাত্রীদের জন্য বরিশালের খ্যাতনামা পাইনএপল কিনে আনা। প্রতিবার যখন "বাগমতী এক্সপ্রেস" সীমান্ত পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতো, তখনই আমরা সব যাত্রী মিলে বরিশালের পাইনএপল কিনে খেতাম।

পরিবর্তিত সময়:
দেশ ভাগের পরে, সেই সময়কার "বাগমতী এক্সপ্রেস" দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একটিকে "বাগমতী এক্সপ্রেস" এবং অন্যটিকে "মাধা এক্সপ্রেস" বলা হতো। "মাধা এক্সপ্রেস" কলকাতা থেকে ঢাকা পর্যন্ত চলাচল শুরু করে। এবং "বাগমতী এক্সপ্রেস" দিল্লি থেকে ময়সোর পর্যন্ত চলাচল করে আসছিল। পরে, "মাধা এক্সপ্রেস"-এর নাম পরিবর্তন করে "মিতালী এক্সপ্রেস" রাখা হয়েছে। কিন্তু সেই "বাগমতী এক্সপ্রেস" এখন আর আগের মতো নেই। সেই আগুন-ভূত-লোকের স্টেশন-পাইনএপল সবই আর নেই। দ্রুতগামী সময়ের পাশাপাশি "বাগমতী এক্সপ্রেস"ও বদলে গেছে। এখন আর সেই আগের মতো নেই। এ