কারও সঙ্গে হয়তো তোমার বেশ ভাব। কিছুদিন ধরেই তাকে আরো ভালোভাবে চেনার চেষ্টা করছো। হয়তো ভেবেছো এবার তোমার কথাটা সে নিশ্চয়ই গুরুত্বের সঙ্গে শুনবে। কিন্তু আচমকাই একদিন দেখলে সে তোমার কথাটাকে একেবারেই জলের দাম দিচ্ছে না। ওর কথায়ই সে নিজে চলতে চায়। এমনকি প্রয়োজনে তোমার কথাটাকে উপেক্ষা করতেও দ্বিধা করছে না। এমন পরিস্থিতিতে তুমি কী করবে? কিংবা তোমার সঙ্গে আগেও এমন পরিস্থিতি ঘটেছে? তুমি কী করেছিলে?
সম্প্রতি এমন একটি পরিস্থিতির সাক্ষী হয়েছিলাম, যা আমায় বেশ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। একটা সংগঠনের দুটি প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলাম আমি। সংগঠনের একজন সহকর্মী প্রকল্প দুটির অন্যতমের সদস্য। এক বৈঠকে সে তার প্রকল্পের কাজগুলো ঠিকভাবে করতে না পারার জন্য আমাকে দোষারোপ করতে থাকে। তার অভিযোগ ছিল আমি কাজগুলো ঠিকমতো তদারকি করছি না। তখন তার কথা শুনে মনে হয়েছিল, আমার সঙ্গে থাকার কারণে এই অপমান সহ্য করতে হল। কিন্তু বৈঠক শেষে আমি বুঝতে পারলাম, তার আচরণটা শুধু আমাকে দোষারোপ করার জন্য নয়। সে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে, যেখানে সে নিজের মতো করে সব কাজ করতে পারবে। কিংবা এককথায় যে কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাজ করবে। মূলত সে চায় স্বাধীনভাবে কাজ করতে।
এই ঘটনার পর আমি বেশ কয়েকদিন ভাবনায় ডুবে ছিলাম। সে কি আসলেই স্বাধীনভাবে কাজ করতে চায়? নাকি তার অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে? কিংবা সে অন্যদের সাহায্য ছাড়াই কাজ করতে চায়? নাকি সে কি আমার প্রতি তার ক্ষোভを表 করার একটা উপায় খুঁজে পাচ্ছে? কেন সে অন্যদের সাহায্য ছাড়াই কাজ করতে চায় সেটা নিয়ে আমার আর কোনো চিন্তা নেই। কিন্তু সে যা করে যাচ্ছে সেটা কি ঠিক হচ্ছে? সে কি তার সহকর্মীদেরকে ছাড়া সত্যিকারের অর্থে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে? ঠিক এই প্রশ্নটাই আমায় বেশি ভাবাচ্ছে।
আন্তরিকভাবে হলেও মনে হয় এখানে প্রচলিত প্রচলিত কথাটাই সত্য। একটা কাজ করতে হলে যে একটা দলের দরকার হয়। আর এই দলটা হল একগুচ্ছ স্বাধীন সত্তার সমন্বয়। স্বাধীন বলেই এই সত্তাগুলোর প্রত্যেকটিরই নিজস্ব কিছু প্রেক্ষাপট রয়েছে, নিজস্ব কিছু মূল্যবোধ রয়েছে, নিজস্ব কিছু অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে একটা কাজ করতে গেলেই রাজনীতি বাধবে। যারা সে কাজটা করছে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাধবে। কিন্তু দ্বন্দ্ব থাকুক। এটা আসলে একটা সুযোগ। একসঙ্গে কাজ করে নিজেদের দিগন্তকে আরও প্রশস্ত করার এই দ্বন্দ্বকে ব্যবহার করার একটা সুযোগ। আসলেই কি আমরা এই সুযোগটাকে কাজে লাগাচ্ছি? নাকি সবাই নিজের মতো করে চলাটা আমাদের জন্য বেশি স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক? স্বাধীনতা কি আসলেই এতটাই গুরুত্বপূর্ণ? নাকি স্বাধীনতা নয়, কিংবা স্বাধীনতা বলে কিছু নেই আর আমরা, কিংবা সে, আসলেই অসহায়? তাকে, বা আমাদের কী সত্যিই স্বাধীনতার দরকার? নাকি আমাদের, বা তার কি একটা অবলম্বনের দরকার?