CSK ম্যাচ: দু'দিন পর চেন্নাইয়ের বড়ো দিন




তারিখটা ২৩ ডিসেম্বর। ম্যাচ শুরু হবে দুপুর দুটোয়। শুক্রবার মানেই অফিস থেকে বেরিয়ে তাড়াতাড়ি পুঁছে যাব স্টেডিয়াম। ম্যাচ শুরুর আগেই পৌঁছতে হবে স্টেডিয়ামে। কারণ স্বচ্ছন্দে সবাইকে পেরিয়ে আমায় উঠে যেতে হবে থার্ড টায়ারে। আমার সিট নম্বর ৭২, স্ট্যান্ড নম্বর D6। থার্ড টায়ারে প্রবেশের জন্য লিফট নিতে হবে। লিফটের সামনে লম্বা লাইন হয়। তাই জানি ভালো আগে গেলে বেটার।
মাঝের দরজা দিয়ে মাঠের দিকে তাকালেই দেখা যাচ্ছে সবুজ মাঠের মাঝে সাদা পিচ। মাঠের চারপাশে কত কিছু যে আছে তা বলার নেই। চোখের ঠিক সামনে স্কোরবোর্ড। যেখানে ভেসে উঠছে বিভিন্ন তথ্য। মাঠের দু'পাশে ডাগআউট, যেখানে বসে খেলোয়াড়রা। মাঠের চারদিকে গ্যালারি, যেখানে বসেন দর্শকরা। গ্যালারির বিভিন্ন অংশ। থার্ড টায়ারের নিচে প্রথম সারিতে বসেন VIP দর্শকরা। তারপরে স্টলস, করপোরেট বক্স আর সবশেষে থার্ড টায়ার। স্টেডিয়ামে প্রবেশের পরে আমার πρῶথম কাজ থার্ড টায়ারে চলে যাওয়া।
যতক্ষণ ম্যাচ শুরু না হয় বড়ো বড়ো পর্দায় এমন কিছু দেখানো হয় যাতে দর্শকরা বোর না হন। কখনও কোনো বিজ্ঞাপন, কখনও সামনের দিনের ম্যাচের সূচি, কখনও আবার কোনো পুরোনো ম্যাচের হাইলাইটস। ম্যাচ শুরুর আগে আমি অপেক্ষা করি শুরুর সুর। এই সুর শুনলেই বুঝি যে, এবার খেলা আর বেশি দেরি নেই।
আমি সিএসকে-র ভক্ত। আমি দেখেছি, যখনই আমার প্রিয় দল খেলতে নামে স্টেডিয়ামের সমস্ত আমেজ বদলে যায়। যেন একটা উৎসবের মতো মনে হয়। সব দর্শক হয়ে ওঠেন এক, সবার স্লোগান এক, সবার চিৎকার এক। সেই স্লোগান, সেই চিৎকার শুনলে মনে হয় যেন সবাই একসঙ্গে একদম একসঙ্গে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
আমার বেশিরভাগ সময়ই কাটে দু’টি জিনিস নিয়েই। একটা সিএসকে আর একটা আইপিএল। সিএসকে মানে চেন্নাই সুপার কিংস। আইপিএল মানে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। আইপিএল একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট যেখানে ৮টি দল একে অপরের বিরুদ্ধে খেলে। আইপিএলকে খেলার ক্ষেত্রে ভারতীয় ক্রিকেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এটি ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড (BCCI) দ্বারা পরিচালিত হয়। সিএসকে-এর ক্যাপ্টেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। ধোনি আমার প্রিয় খেলোয়াড়। তাঁর খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে পৌঁছে যাই যখনই সিএসকে ম্যাচ খেলে।
সিএসকে-এর সব ম্যাচই খুব উপভোগ করি। তবে গত বছরের ফাইনাল ম্যাচটি খুব বেশি মনে আছে। কারণ সেই ম্যাচে সিএসকে কুমারী চেন্নাই সুপার কিংস থেকে রানি চেন্নাই সুপার কিংসে পরিণত হয়েছিল। সেদিন স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকরাও লাল আর হলুদ পোশাক পরে সিএসকে-র সমর্থনে একসঙ্গে চিৎকার করেছিলেন। সেই দৃশ্য আমি কখনও ভুলতে পারব না।
এখন খেলা শুরু হয়ে গেছে। মাঠে চলছে ব্যাটিং আর বোলিং। ডিসপ্লে বোর্ডে দেখানো হচ্ছে কে কত রান করলেন, কত ছক্কা মারলেন, কত বোল ফেলেছেন, কত রান দিয়েছেন, কত উইকেট নিয়েছেন। কখনও ডিসপ্লে বোর্ডে খেলোয়াড়দের ছবি দেখানো হয়, কখনও ক্যামেরা ঘুরিয়ে দেখানো হয় দর্শকদের। কখনও দেখা যায়, দর্শকরা তাদের প্রিয় দলকে সাপোর্ট করতে গ্যালারিতে নাচ করছে, গান গাইছে। আবার কখনও কখনও খেলোয়াড়রা দর্শকদের সঙ্গে মিশে নাচে, গানে যোগ দেয়।
আজকের ম্যাচে সিএসকে-র খেলা খুব ভালো। আমাদের দলের ব্যাটসম্যান খুব সুন্দর করে খেলছেন। সেই সঙ্গে বোলাররাও দারুণ বোলিং করছেন। আজকের ম্যাচে আমাদের দলের জেতাটা খুব জরুরি। কারণ আমরা প্লে অফে যেতে হলে এই ম্যাচটা আমাদের জিততেই হবে। তাই মাঠের সব দর্শক মন দিয়ে ম্যাচ দেখছি। মাঝে মধ্যে চিৎকার করছি, মাঝে মধ্যে হাততালি দিচ্ছি। আমরা সবাই চাই আজ আমাদের দল জিতুক।
সিএসকে-র ম্যাচ শেষ হয়ে গেছে। আমাদের দলের আজ জয় হল না। আমরা হেরে গেলাম। তবে, আমাদের দলকে আজ যেভাবে খেলতে দেখেছি তাতে মনে হয়েছে আমরা জিতে গেছি। মাঠে দর্শকরা আজ সবাই মিলে সিএসকে-র প্রশংসা করলেন। খেলোয়াড়রাও আমাদের সাপোর্টের জন্য ধন্যবাদ জানালেন। এই নিয়ে আমার মনে একটা গর্বের অনুভূতি জন্মাল। গর্বের সেই অনুভূতি যা বোঝাতে পারব না, শুধু অনুভব করা যায়।
সব কিছুর শেষে বেরোতে বেরোতে মনে হল এক লিস্ট বানাতে হবে। লিস্টটা নিজের কথা ভেবে নয়, যারা আগে কখনো ম্যাচ দেখতে আসেননি, তাদের কথা ভেবে। যাতে তারা স্টেডিয়ামে সব দেখে এসে পরে কাউকে কিছু না জিজ্ঞেস করতে না হয়।
  • কোনো স্টেডিয়ামে