Holika Dahan 2024




ফাল্গুনের পূর্ণিমা তিথিতে পালিত হয় হোলিকা দহন উৎসব। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই উৎসবটি বিভিন্ন রীতি-নীতি ও নামে পালিত হয়। দোলযাত্রা, হোলিকা হোলিকা দহন, কামদাহন, বসন্ত পঞ্চমী ইত্যাদি নামেও পরিচিত।
হোলিকা দহনের উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন পুরাণে ভিন্ন ভিন্ন কাহিনী রয়েছে। প্রচলিত কাহিনী অনুযায়ী, একসময় হিরণ্যকশ্যপ নামে এক অত্যাচারী দৈত্য রাজ্য শাসন করত। সে নিজেকেই সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করত এবং নিজের পুত্র প্রহ্লাদকেও নিজের পুজা করতে বাধ্য করত। কিন্তু বিষ্ণুর ভক্ত প্রহ্লাদ নিজের পিতার কথা শুনল না। হিরণ্যকশ্যপ ক্রোধে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রহ্লাদকে মারার জন্য একের পর এক চেষ্টা করল। কিন্তু প্রতিবারই বিষ্ণুর কৃপায় প্রহ্লাদ রক্ষা পেত।
অবশেষে হিরণ্যকশ্যপের বোন হোলিকা তাকে একটি উপায় বাতলে দিল। হোলিকার দেহে আগুন লাগলেও তা জ্বলে না। সে ভাইকে বলল যে, সে প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুনে বসবে। আগুন হোলিকাকে ছুঁবে না, কিন্তু প্রহ্লাদ পুড়ে মারা যাবে। হিরণ্যকশ্যপ রাজি হল এবং হোলিকা ও প্রহ্লাদকে একসাথে আগুনে বসানো হল। কিন্তু বিষ্ণুর কৃপায় হোলিকা পুড়ে ছাই হয়ে গেল এবং প্রহ্লাদ অক্ষত রইল। এই ঘটনার স্মৃতিতে প্রতি বছর হোলিকা দহনের রীতি প্রচলিত হয়।
হোলিকা দহনের দিন সন্ধ্যায় বাড়ির উঠোনে বা মাঠে কাঠ, গোবরের উপলি, পুরাতন জিনিসপত্র ইত্যাদি দিয়ে হোলিকা দগ্ধ করা হয়। তারপর তার চারদিকে ঘুরে ঘুরে আগুনে তৈলে দিয়ে তোলা হয়। সেই আগুনের তাপ ও আলো দেহে মেখে অসুখ-বিসুখ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে বিশ্বাস করা হয়।
হোলিকা দহন উৎসব মূলত শীত ঋতুর শেষ ও বসন্ত ঋতুর আগমনের সূচনা করে। এই দিনে রঙিন গুঁড়ো ও জল দিয়ে একে অপরকে রাঙিয়ে দেওয়ার প্রথা রয়েছে। একে হোলি বা দোল উৎসব বলা হয়। হোলির রং মনুষ্য সমাজে ভেদাভেদ ভুলিয়ে সহমর্মিতা, আনন্দ ও উৎসাহের বার্তা ছড়ায়।
আমার ছোটবেলার হোলিকা দহনের কিছু মধুর স্মৃতি আজও অমলিন রয়ে গেছে। প্রতি বছর আমাদের বাড়ির সামনেই একটি বড় হোলিকা দগ্ধ করা হত। আমরা বন্ধু-বান্ধব মিলে সারা দিন লাকড়ি ও গোবরের উপলি সংগ্রহ করে একসাথে রাখতাম। সন্ধ্যা হওয়ার আগে বাবা হোলিকা দগ্ধ করতেন। তারপর আমরা সবাই আগুনের চারদিকে ঘুরে ঘুরে আনন্দে মেতে উঠতাম। দিদি ও মা আমাদের হোলির রং ও জল দিয়ে রাঙিয়ে দিতেন। সেই আনন্দময় দিনগুলোর কথা ভাবলেই আজও মনে হয়, যেনকি সময় থেমে গেছে সেই সুখের স্মৃতিতে।
বর্তমানে আধুনিক জীবনযাত্রার নিয়মে অনেক পরিবর্তন এসেছে। হোলিকা দহনের দিনও সকলের জন্য ছুটি নেওয়া সম্ভব হয় না। তবে শহর ও গ্রামে এখনও এই উৎসব উদযাপন করা হয়। হোলিকা দহনের আনন্দ আজও অমলিন রয়ে গেছে। সবাইকে মিলে হোলিকা দহন উৎসব পালন করে শীতের শেষ ও বসন্তের আগমনের আনন্দকে আরও বর্ণিল ও আনন্দময় করে তোলা যায়।
এই হোলিকা দহন আপনার জন্য শুভ ও আনন্দময় হোক। সবুজ, নীল, লাল, হলুদ সহ সব রঙের আনন্দে আপনার জীবন পূর্ণ হোক।