IND vs ZIM, 5th T20




জুলাইয়ের শেষে জিম্বাবুয়েতে ভারতীয় দলের পাঁচটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের শেষটিতে স্বাগতিক দলকে ১৭ রানে পরাজিত করেছে ভারত।

তেণ্ডুকানি আফ্রিকার দেশ সফরে এটা ভারতের প্রথম টি-টোয়েন্টি জয়। এই জয়ে সিরিজও জিতেছে ভারত। ফল মাত্রই সমতুল্য না, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় দলের পারফর্মেন্স আনন্দ দেয়নি। তার ওপর পাঁচ ম্যাচের সিরিজের শুরুটাও ভালো হয়নি। প্রথম দু'‌টি টি-টোয়েন্টিতে হেরেছে ভারত। দলের বিরাট কোহলি ছাড়া বিদেশ সফর, আর দলের ভাল পারফর্মেন্স না থাকায় খেলোয়াড়দের ওপর চাপ অনেকটাই ছিল বলা যায়। কিন্তু খেলার মাঠে সেটার ছাপ পড়েনি।

সিরাজের পেসে উড়ে গেল জিম্বাবুয়ে

আফ্রিকায় এসে সিরাজ যেন সত্যজিৎ রায়ের কথার সত্যতা প্রমাণ করেছেন। সিরাজের নেতৃত্বে বলার মাত্রায় এতো প্রাণ ছিল যে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা ব্যাট ঘুরাতে ভয়ে পেয়ে গেছে। ফল তো সকলেই জানেন।

আফ্রিকার উঁচু-নিচু উইকেটেও সিরাজ তাঁর লাইন ও লেন্থ নিয়ে ভীষণ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর সেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াই কাজে লেগেছে। ম্যাচে তিনি নিয়েছেন 3 উইকেট। মাত্র 10 রান দিয়ে তিন উইকেট, ব্যাটসম্যানদের কাছে যা দাঁড়িয়েছিল অসম্ভব মনে হয়। এই সিরিজে যেমন সিরাজের উইকেট ব্যাপারটা অসাধারণ, তেমনই তাঁর বোলিং লাইনও অনেকটা অসাধারণ। উইকেট যা-ই হোক, সিরাজের লাইন ও লেন্থ সব সময় দেখতে চাই। সিরাজ এমন একজন বোলার যে কেবল উইকেট নেন না, প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের মানসিক চাপও দেন। আর এটাই একজন চ্যাম্পিয়ন বোলারের কাজ।

দিনেশ কার্তিকের দায়িত্বশীল ইনিংস

ভারতীয় দল যখন 99 রানে 4 উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ার মুখে ছিল, তখন ক্রিজে এসে দিনেশ কার্তিক ইনিংসটা সামাল দিয়েছেন। কিছু চতুর শট খেলে এবং দলীয় সঙ্গী অক্ষর পটেলের সঙ্গে ভালো ব্যাটিং করে তিনি নিশ্চিত করেছেন ম্যাচ যাতে ভারত হারে না।

কার্তিকের ইনিংসটা প্রমাণ করল যে বয়স পাঁচের অঙ্কে পৌঁছলেও তাঁর ব্যাটিং অপরিবর্তিত। তাঁর আজকের দায়িত্বশীল ইনিংস দুর্দান্ত। এই ম্যাচের পরে কার্তিককে দলে রাখা না রাখার প্রশ্ন উঠছে। তবে তরুণদের সঙ্গে তাঁর এই ব্যাটিং যে খুব কিছুটা ভারতীয় দলের জন্য কাজে লাগবে, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

মাধ্যমপন্থীদের দুর্দান্ত হামলা

জিম্বাবুয়ে বনাম ভারত ম্যাচে মাধ্যমপন্থীরা দুর্দান্ত হামলা চালিয়েছে। এখানে সিরাজকে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানতে হবে। তাঁর পরে আবেশ, পটেল দু'‌জনই দারুণ বোলিং করেছেন। এই ম্যাচে ভারতের ফাস্ট বোলাররা প্রমাণ করেছেন যে খেলায় জয়ের জন্য ফাস্ট বোলারদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের বোলিং ক্রিকেটের ভবিষ্যত। বিশেষ করে এই টি-টোয়েন্টি যুগে ফাস্ট বোলারদের গতি খুবই প্রয়োজন। তাঁদের দারুণ বোলিংয়ের জন্যই জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা উইকেট সামলাতে পারেননি।

নতুন প্রতিশ্রুতি অনুজ রাওয়াত

ভারতীয় দলের এই সফরে অনুজ রাওয়াতের জায়গা নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল। তিনি দলের সঙ্গে সফরে গেলেও খেলার সুযোগ পাননি। অনেকেই ভেবেছিলেন যে তিনি ফিরে গেছেন, কিন্তু তা ছিল না। তিনি দলের সঙ্গে ছিলেন। এই ম্যাচে তিনি প্রথমবার খেলতে নেমে প্রমাণ করেছেন যে তিনি আগামী দিনের জন্য কতটা প্রতিশ্রুতিশীল।

রাওয়াতের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে এই তরুণ ভবিষ্যতে ভারতের জন্য খেলতে পারবেন। তাঁর ব্যাটিং স্টাইল, মাঠে অবস্থান এবং উইকেটের দায়িত্ববোধ—সবকিছুই দারুণ। মনে রাখতে হবে, তিনি একজন তরুণ খেলোয়াড়। আর এখন থেকে তাঁর সমালোচনা করার দরকার নেই। তবে তাঁর মধ্যে প্রতিশ্রুতি আছে।

শিরষ
যত দিনে এই সিরিজটি চলল, ভারতীয় দলের মনোবল উঠানামা করতে দেখা গেল। ম্যাচ হেরেছে, জিতেছে, কিন্তু মনোবলটা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। এই ম্যাচেও তাই হয়েছে। এক সময় ম্যাচ যেন জিম্বাবুয়েই জিতবে, এমনটাই মনে হচ্ছিল। তবে ভারতীয় দলের মানসিক মজবুতি দেখে মনে হল, এরা আরও অনেক লড়াই করবে। দলের মধ্যে এখনও প্রতিশ্রুতি আছে। আর সেই প্রতিশ্রুতির পিছনেই রয়েছে দলের কর্মীদের ব্যাপক চেষ্টা। এই প্রতিশ্রুতি যতদিন থাকবে, ততদিন ভারতীয় দল জিতবে।