Kanchanjunga Express




আমি যখন ছেলে ছিলাম, তখন আমার বাবা আমাকে প্রায়ই রেল স্টেশনে বেড়াতে নিয়ে যেতেন। স্টেশনের হালচাল, ট্রেনের আনাগোনা, যাত্রীদের উচ্ছ্বাস- এইসব দেখতে আমার খুব ভালো লাগতো। আর যখন কোনো ট্রেন ছাড়তো, তখন ট্রেনের সিটি বাঁশি শুনে আমার বুকটা কেঁপে উঠতো।
একদিন আমরা স্টেশনে গিয়েছিলাম, তখন আমার বয়স হবে আনুমানিক 8-9 বছর। সেদিন আমার বাবা আমাকে বললেন, "দেখ, এই যে ট্রেনটা দাঁড়িয়ে আছে, এটার নাম 'কঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস'। এটা সিলিগুড়ি থেকে নতুন দিল্লি যায়।"
ট্রেনটা দেখে আমার খুব মনটা চাইলো এতে একবার চড়তে। আমি বাবাকে বললাম, "বাবা, আমাকে এই ট্রেনে একবার চড়তে দাও না।"
আমার বাবা হাসলেন এবং বললেন, "চড়বি তো। তবে এটা খুব দূরের ট্রেন। তুমি কি এত দূরের যাত্রা করতে পারবে?"
আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বললাম, "পারবো। আমি খুব সাহসী।"
বাবা তখন টিকিট কেটে দিলেন এবং আমাকে ট্রেনে তুলে দিলেন। আমার কম্পার্টমেন্টে আরও দু'জন যাত্রী ছিল। এরা ছিলেন দু'জন বয়স্ক দম্পতি। তারা আমাকে দেখে খুব আদর করলেন। আমিও তাদের সঙ্গে খুব সহজেই মিশে গেলাম।
ট্রেনটা ছাড়লো। আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলাম, গাছপালা, ঘরবাড়ি, সব কিছু দ্রুত গতিতে পেছনে ছুটে যাচ্ছে। আর যাত্রীরা, কেউ ঘুমাচ্ছে, কেউ বই পড়ছে, আবার কেউ গল্প করছে।
আমার খুব মজা লাগছিল। আমি এই যাত্রাকে উপভোগ করছিলাম মনের সুখে। এই ট্রেনে আমি অনেক নতুন জায়গা দেখলাম, নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হলাম।
আমার যাত্রা শেষ হলো পশ্চিমবঙ্গের নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে। সেখানে আমার এক আত্মীয় আমাকে নিতে এসেছিলেন। তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন তাঁর বাড়িতে। আমি সেখানে দু'দিন কাটিয়ে তবে ফিরে এলাম।
এই যাত্রাটা আমার কাছে ছিল এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এখন যখন আমি পেছনে ফিরে তাকাই, তখন সেই দিনগুলোর কথা মনে হলে মনে হয় যেন সেটা ছিল এক স্বপ্ন।
একটা স্বপ্ন যেখানে আমি এক সুদূর ভ্রমণে গিয়েছিলাম, নতুন জায়গা দেখেছিলাম, নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিলাম। আর সেই স্বপ্নটা ছিল আমার জন্য এক অ unforgettable স্মৃতি।