SA vs AFG




এই যে হালকা রঙের বলের আসরটা চলছে, আইসিসি কর্তৃপক্ষের আরেকটা সম্ভাব্য রিসার্চের জায়গা। চিরচেনা কিছু দেশ থাকার পাশাপাশি সুযোগটা পেয়ে গেছে আফগানিস্তানের মত দল। আগে আফগানিস্তানের সাথে আমাদের সরাসরি রেষারেষি ছিল জাতীয় দলের স্তরে ইন্টারন্যাশনাল সিরিজে। ক্যাম্পাসে বা হোস্টেলে ক্রিকেটের গল্প হোক, নাকি কফি শপে রাতভর আড্ডা—আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদের আলাদা ভাবেই দেখা হতো। বর্তমানে চলছে মহাদেশীয় অঞ্চলের দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। এদিকে সাম্প্রতিক কালে আফগানিস্তান দলের পারফরম্যান্স কমবেশি সবাই নজরে রাখছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা—ক্রিকেট বিশ্বে আফ্রিকা মহাদেশের একটা অন্যতম প্রভাবশালী দেশ। আমার মনে হয়, শুধু ক্রিকেটেই নয়, ফুটবলেরও তারা অসম্ভব জনপ্রিয়। বিশ্বে বড় খেলার আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে লাগাতার দেখা গেছে। এক সময় তো প্রোটিয়াসদের ভয় পেত সবাই। আমাদের ওডিআই প্রতিপক্ষ হিসেবে খুবই ভালো। রাসেল ডোমিঙ্গোর অধীনে এবার ওডিআই সিরিজে আবারো দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলবে আফগানিস্তান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জয় দিয়েই আলোচনায় আসে দেশ-কাল নির্বিশেষে যেকোনো দল। সেই হিসেবে আফগানিস্তান হলো সেই রকম একটা দল। আফ্রিদি, বুম বুম-এর মত তারকা খেলোয়াড়দের উত্থানের মতই ওয়ানডেতে জয়গুলো তাদের আলোচনায় এনেছে। সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বেশ কিছু ম্যাচ দেখার সুযোগ হয়েছিল। সেই ম্যাচে আফগানিস্তানের খেলাটা অসাধারণ ছিল। তার মানে এই নয় যে তাদের খেলার সব কিছুই ভালো লাগে। সবখানেই তাদের ঘাটতি আছে। কিন্তু যে জিনিসটা আছে, সেটা হলো তাদের ফাইটিং স্পিরিট।
মাঠের খেলায় হারজিত থাকবেই। কিন্তু ভালো লড়াইটা আগের মতই অব্যাহত রেখেছে আফগানিস্তান। বিশ্বকাপের আফগানিস্তান দলের সাথে অ্যাশটন আগারের ঘটনাটার কথা অনেকেরই মনে আছে। কী রকম ভয়ংকর একটা বাউন্সার মারল অ্যাশটন। সেই দৃশ্যটা এখনো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। মাঠের খেলাতে এমনটাই হয়। সবকিছুটা ভুলে গিয়ে আবারো দল তৈরি হয়েছে। পরের বছর ওডিআই বিশ্বকাপ হওয়ার আগে দারুণ সময় তাদের এই পুরুষ দলের। সাথে আছে স্পিণার রশীদ খান। এখনো ব্যাটসম্যানদের জন্য ভয়ঙ্কর একটা নাম। ওডিআই আর টি-টোয়েন্টিতে রশীদ ছাড়া আফগানিস্তানের কথা ভাবা যায় না। ও ডুবের মত হাত দিয়ে এমন সব স্পিন করতে পারে যে ব্যাটসম্যানরা বিপাকেই পড়ে যায়। কখনো এমনও দেখা গেছে, খেলাতে পরাজিত হওয়ার পরও রশীদকে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ দেওয়া হয়েছে। রশীদ খানের স্পিনের জাদুতে আফগানিস্তানের অর্জনের গল্পই অন্য রকম। নিজের দেশে যুদ্ধের মধ্যেও দেশকে দিয়েছে বিশ্ব সফলতা।
কিন্তু শুধু রশীদ খানই নয়, দলের প্রতিটা সদস্যই ভালো ফর্মে। নিজেদের স্ট্রেংথটা বুঝে খেলে। সময়ের সাথে সাথে তারা ডেভেলপ হচ্ছে। ব্যাটসম্যান হোক আর বোলার—সাথে সাথে দল হিসেবে তারা বেড়ে উঠছে। বেশ কয়েকটা ম্যাচের পরেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম জয় এখনো আসেনি। পূর্বে খেলা দুটো ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে গেছে আফগানিস্তান। তবে আফগানিস্তানের বোলারদের জন্য সাউথ আফ্রিকার পিচ খুবই উপযোগী। পেসার হোক আর স্পিনার—দুটোই ভালো পারফরম করতে পারে। খুব শিগগিরই আফগানিস্তানের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকার আরও দুটো ম্যাচ হওয়ার কথা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম জয়ের স্বাদটা এবার পাবে কি আফগানিস্তান? ডি কক, রাবাদা, মিলারদের বিরুদ্ধে দারুণ একটা লড়াই হবে বলেই মনে হচ্ছে।
এদিকে টেস্ট খেলায় আফগানিস্তান এখনো খুব বেশি অভিজ্ঞ নয়। খেলাটা দেখতে এবং উপভোগ করতে গেলে উইকেটের ম্যাচ জেতাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টেস্ট খেলার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ধৈর্য। প্রতিটা বল খেলাটা সিনেমা দেখার মতো উপভোগ করতে হবে। এই খেলায় হয়তোবা আফগানিস্তানের একটু ঘাটতি আছে। তাই বলে কি হবে? ক্রিকেটের মত এত জনপ্রিয় খেলাটাতে কত রকমের পথ প্রশস্ত হয়েছে! আর সেটার সবচেয়ে বড় গুণ হলো দল হয়ে ওঠা।