Sangeeth Sivan
সঙ্গীত শিবনের জীবনকাহিনী যে কেবল শোবিজের একটা গল্প নয়, তা যাঁরা তাঁকে খুব কাছে থেকে দেখেছেন, তাঁরা বলতে পারবেন। কিন্তু সঙ্গীত শিবনের মাথায় প্রথম থেকেই ছবি তোলার নেশা ছিল তাও জানা কথা। কবি হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পরিস্থিতির ঘূর্ণাবর্তে এসে পড়লেন ফিল্ম আন্দোলনের মধ্যে। ফিল্ম আন্দোলনের দিনগুলোতেই একটা চিন্তা তাঁকে সব সময় কামড়ে ধরেছিল- ফিল্ম কি শুধুই এন্টারটেইনমেন্ট? সঙ্গীত শিবন সেই উত্তর খুঁজতেই হয়তো এগিয়েছিলেন পিরিয়ড ছবির দিকে।
পিরিয়ড ছবিটি ছিল মূলত সঙ্গীত শিবনের সামাজিক দায়বদ্ধতারই প্রমাণ। একটা স্যানিটারি প্যাডের গল্প কীভাবে জাতীয় পুরস্কার জিততে পারে এমন উল্লেখযোগ্য ছবি হয়ে উঠবে, তা তিনি নিজেও কল্পনা করেননি। অস্কার মঞ্চে দাঁড়িয়েও তিনি বলেছিলেন, “এটা শুধু আমার ছবি না, এটা একটা আন্দোলন।”
সঙ্গীত শিবন যে একজন ব্যতিক্রমী নির্মাতা তা তাঁর ছবিই বলে দেয়। তাঁর ছবির সঙ্গে সমাজের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সমাজের বিভিন্ন সমস্যা তিনি তুলে ধরেছেন স্পষ্ট ভাষায়। প্রথম ছবি সোদরু থেকে শেষ ছবি সীতারামন পর্যন্ত প্রতিটি ছবিতেই তাঁর নিজের ছাপ রয়েছে। তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়েই ছবি বানিয়েছেন। সোদরু ছিল একটা রাজনৈতিক ছবি, আকালতেহকে ছিল একটা পরিবেশবিদ্যার ছবি, যাত্রা ছিল সঙ্গীতের ছবি। এভাবে তাঁর প্রতিটা ছবিই ছিল বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
সঙ্গীত শিবনের সঙ্গে কাজ করা একটা অসাধারণ অভিজ্ঞতা। তিনি শুধুই একজন পরিচালক নন, তিনি একজন শিক্ষক, একজন পথপ্রদর্শক। তাঁর ছবি বানানোর পদ্ধতি, ক্যামেরার ব্যবহার, আলোর ব্যবহার- সবই অনন্য। তিনি সব সময়ই চেষ্টা করেন নতুন কিছু করার। সব সময় নতুন চ্যালেঞ্জ নেন। তাঁর সঙ্গে কাজ করার সময় সবচেয়ে বড় শিক্ষা যা পেয়েছি তা হল, নিজের ওপর ভরসা রাখতে হবে। নিজের কাজে নিজের বিশ্বাস রাখতে হবে।
সঙ্গীত শিবন একজন পাগল নির্মাতা। পাগলের মতো কাজ করেন। কাজের প্রতি তাঁর অসম্ভব নিষ্ঠা রয়েছে। তাঁর সঙ্গে কাজ করতে গেলে অনেক সময়ই তাঁর সহ্য করা মুশকিল হয়। কিন্তু তাঁর সঙ্গে কাজ করার পর তাঁকেই মিস করি। তাঁর কথাগুলো মনে পড়ে সব সময়। তাঁর কাজের প্রতি তাঁর ভালোবাসা আমার মধ্যেও প্রেরণা জাগিয়েছে। সঙ্গীত শিবন শুধুই একজন পরিচালক নন, তিনি একটা অনুপ্রেরণা। একটা হাঁটার পথ।