SHEETAL DEVI
শীতল দেবী, এই নামটি পশ্চিমবঙ্গে অতি পরিচিত। তাঁর বিখ্যাত মন্দিরটি শিলিগুড়ির নিকট জলপাইগুড়ি জেলার বেলাকোবায় অবস্থিত। পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই স্থানটি তীর্থযাত্রী এবং পর্যটকদের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয়।
বিখ্যাত কিংবদন্তি
শীতল দেবীর উৎপত্তি নিয়ে একটি প্রাচীন কিংবদন্তি প্রচলিত রয়েছে। জনশ্রুতি অনুযায়ী, দেবীর প্রকাশ ঘটেছিল একটি কদম গাছের নিচে। একদিন, সেই গাছের নিচে দুটি গুয়ালো গরু চড়াচ্ছিল। হঠাৎ, তারা তাদের একটি গরুর চোখ থেকে দুধের স্রোত বের হতে দেখে মুগ্ধ হয়। সেই দুধ তাদের দুধের পাত্র এবং মাটিতে পড়তে শুরু করে।
গুয়ালোরা তাদের অভিজ্ঞতা গ্রামের প্রধানকে জানালে, তিনি গ্রামবাসীদের সেই স্থানে নিয়ে যান। সেখানে তারা কদম গাছের নিচে একটি শিলামূর্তি আবিষ্কার করেন। সেই শিলামূর্তিটিই দেবী শীতলার প্রকাশ বলে বিশ্বাস করা হয়।
মন্দিরের গুরুত্ব
শীতল দেবীর মন্দিরটি ১৫০ বছরেরও বেশি পুরানো। তবে, সাম্প্রতিককালে এটি পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। মন্দিরটি সাদা মার্বেল দিয়ে নির্মিত এবং একটি কৃত্রিম পুকুর দ্বারা পরিবেষ্টিত। মন্দিরের প্রবেশদ্বারে একটি বিশাল হাতির মূর্তি রয়েছে, যা দেবীর শক্তি এবং রক্ষার প্রতীক বলে বিশ্বাস করা হয়।
মন্দিরটির প্রধান কক্ষে দেবী শীতলার একটি দ্বি-হাতযুক্ত মূর্তি রয়েছে। মূর্তিটির একটি হাতে ত্রিশূল এবং অন্য হাতে খুলির মালা রয়েছে। মূর্তির সামনে সর্বদা একটি প্রদীপ জ্বলছে এবং ভক্তরা সর্বদা প্রার্থনা ও পুজো অর্পণ করেন।
তীর্থযাত্রা কেন্দ্র হিসাবে
শীতল দেবীর মন্দির পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান তীর্থযাত্রা কেন্দ্র। দেবীর আশীর্বাদ কামনায় বছরের পর বছর ধরে ভক্তরা এখানে ভিড় জমান। বিশেষ করে দেবীর পূজার সময়, যা সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে পালিত হয়, তখন মন্দিরে ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে।
ভক্তদের বিশ্বাস
ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে দেবী শীতলা মস্তিষ্ক জ্বর, গুটিবসন্ত এবং অন্যান্য রোগ থেকে তাদের রক্ষা করেন। তাই, অনেক পিতামাতা তাদের শিশুদের দেবীর কাছে নিয়ে আসেন যাতে তাদের রোগা ব্যাধি থেকে মুক্তি পায়।
পরিদর্শন করার সেরা সময়
শীতল দেবীর মন্দির বছরের যেকোনো সময় পরিদর্শন করা যায়। তবে, শীতকালে, যখন আবহাওয়া আরামদায়ক হয়, তখন সফর করা সবচেয়ে ভালো। মন্দিরটি শিলিগুড়ি থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং বাস বা ট্যাক্সি দ্বারা সহজেই পৌঁছানো যায়। তাই পরেরবার যদি পশ্চিমবঙ্গে ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন, তাহলে শীতল দেবীর মন্দিরটি অবশ্যই আপনার ভ্রমণের তালিকায় রাখুন। এই মন্দিরটি তীর্থযাত্রা এবং পর্যটন উভয়ের জন্যই একটি দুর্দান্ত স্থান।