SM Krishna




আমার বিশ্বাস ছিল, কয়েক মাস পরে আমার মন অনেকটা শান্ত হয়ে আসবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতি হালকা হয়ে যাবে এবং আবেগগুলিও কম প্রকট হয়ে পড়বে। আমি ভুল ছিলাম। বস্তুত, বিপরীত ঘটনা ঘটেছে। আমার স্মৃতি এখন আরও প্রখর হয়ে উঠেছে, কিছু অতি স্পষ্ট, যেন ফোটোগ্রাফিক কিংবা ভিডিও ফুটেজের মতো। এগুলি কয়েক মিনিট, এমনকি কয়েক সেকেন্ডের মতোই আমার মনকে আচ্ছন্ন করে দেয়।
একটা ব্যাপার প্রত্যেকটা মানুষকেই একটা না একটা সময় ভাবতে হয়। হঠাৎ মৃত্যুর পরে আমাদের কী হবে? আমিও এ নিয়ে অনেকবার ভেবেছি। মহাভারত যখন পড়তাম, তখন ভাবতাম এটি কেবল একটি মহাকাব্য নয়। এটা আমাদের জীবনের মহান রহস্যের কথা বলছে। আর সেটা হল মৃত্যুর পর কি হবে। মহাভারতের একটি সূত্র মনে আছে, তাতে শ্রীকৃষ্ণ রাজা দ্রুপদকে প্রশ্ন করেন, ‘মৃত্যুর পরে কী হয়?’ তখন রাজা দ্রুপদ বললেন, ‘শ্রীকৃষ্ণ তা হল এক রহস্য। তুমিই তাই জানো।’ তখন কৃষ্ণ তাকে ব্যাখ্যা করেছিলেন, ‘দ্রুপদ, তুমি যা করো তা জেনে না শিখে কি তোমার মনে শান্তি থাকবে? আজ আমি তোমাকে কিছু বলব।’
তখন কৃষ্ণ তাকে হরি ও হরি-জাতির কথা বললেন। হরি-যাত্রা হল এক রহস্য। কেবল সাধু, সংত-মহাত্মারাই এটার রহস্য জানেন। আমরা নেটিজেনরা তা জানি কি? মহাভারতে কৃষ্ণ বলেন, ‘আমার ভক্তরা হরি-ধামে যান।’ তিনি বলেন, ‘যে আমাকে স্মরণ করতে করতে প্রাণত্যাগ করেছে সে হরি-ধামে যাবে। আর যে আমাকে ভুলে মরেছে সে চক্রাবর্তী রাজা বা ব্রহ্মা হিসেবে জন্মগ্রহণ করে। তবে সে আবার মরবে।’ এরপর আবার নতুন জন্ম।
এহেন চক্রের শেষ নেই। কিন্তু একটা জন্মের পর আর জন্ম নিতে চায় না এমন মানুষ কেউই আছে কি? তারা যদি সত্যিই আছে, তবে তাদের গন্তব্য কোথায়? চার ধরনের গন্তব্য আছে। স্বর্গ, মর্ত্য, পাাতাল এবং ব্রহ্মলোক। এগুলি সমানে ইতিবাচক নয়। কেবল ব্রহ্মলোক ইতিবাচক। স্বর্গ, মর্ত্য আর পাাতাল নেতিবাচক। কিন্তু আমরা সবাই মর্ত্যে আছি। কেউ স্বর্গে যায় না। কেউ পাাতালেও যায় না। কিছু মানুষ জন্মগ্রহণ করে ব্রহ্মা হিসেবে। কিছু মানুষ জন্মগ্রহণ করে চক্রবর্তী রাজা হিসেবে। কিন্তু সবাই মর্ত্য থেকেই যায়।
কী করলে ব্রহ্মলোক বা হরি-ধামে যাওয়া যায়? এটা খুবই কঠিন প্রশ্ন। যুগ যুগ ধরে এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমার কিছু অভিজ্ঞতা আছে। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক ভ্রান্ত ধারণাও আছে। এ নিয়ে কেউ কেউ যা বলে, তা আমার কাছে সঠিক বলে মনে হয় না। তাই আমি সবাইকে বলতে চাই, সিগারেট খাওয়া মদ খাওয়া, মাংস খাওয়া, সংসার ত্যাগ করা – এই সবকিছু নিয়েই অনেক ভ্রান্ত ধারণা আছে।
আসলে কী করলে হরি-ধামে যাওয়া যায়? কেবল চরিত্র, আচরণ আর কর্মের দ্বারা। চরিত্র, আচরণ আর কর্মের দ্বারাই ব্রহ্মলোক বা হরি-ধামে যাওয়া যায়। এই জীবনে যা কিছু ইতিবাচক, শুভ, সৎ, ত্যাগমূলক, সাহসী, অহিংস – এই সবকিছুই আমাদের চরিত্র ও আচরণ গঠন করে। এই জীবনে যা কিছু কর্ম সৎ, ত্যাগমূলক, সেবাধর্মী, হিংসাহীন, অহিংস, ত্যাগপূর্ণ – এই সবকিছুই আমাদের চরিত্র গঠন করে। চরিত্র, আচরণ আর কর্ম এক হলে ব্রহ্মলোক বা হরি-ধামে যাওয়া হয়।
তবে আমার মনে হয়, এর চেয়েও বড় কিছু আছে। চরিত্র, আচরণ আর কর্মের চেয়েও বড় কিছু আছে। সেটা হল বিশ্বাস। বিশ্বাসের কোনো ভিত্তি নেই। তুমি যদি শ্রীকৃষ্ণ বা শ্রী রামচন্দ্রে বিশ্বাস করো, তাহলে সেটা বিশ্বাস। এই বিশ্বাসের কোনো কারণ নেই। কিন্তু দৃঢ় বিশ্বাস হলে ব্রহ্মলোক বা হরি-ধামে যাওয়া হয়।