Umesh Upadhyay




সকলেই তাঁকে চেনেন, সকলেই তাঁর রান্নার গুণ আর তাঁর রসিকতা উপভোগ করেছেন, অথচ তাঁকে কেউ কখনও মুখ খুলে সুন্দর কিছু বলে উৎসাহিত করেননি। এমনকি নিজের রেস্তোরাঁর জন্যও কোনো বিজ্ঞাপন বা সাইনবোর্ড তৈরি করতে তিনি কখনও ভাবেননি। সকলেই মুখে মুখে তাঁর দোকানের নাম ছড়িয়েছেন – ‘‘উমেশ আপাদ্যায়’’।
যদি আপনি শহরের বাইরে থেকে আসেন, তাহলে আপনাকে তাঁর দোকানে পৌঁছাতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হবে। মুম্বাই সেন্ট্রাল থেকে দাদর পর্যন্ত ট্রেন ধরতে হবে। সেখান থেকে ট্যাক্সি বা অটোরিকশা করতে হবে মাতুঙ্গা স্টেশন পর্যন্ত। এরপর হাঁটতে হবে প্রায় এক কিলোমিটার পথ। যদিও তিনি এতদূরে রেস্তোরাঁ তৈরি করেছেন, তবুও তাঁর রান্না খাওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতেই হবে।
আপনি যখন তাঁর দোকানে পৌঁছবেন, তখন আপনার চোখে পড়বে লাইনে দাঁড়িয়ে অসংখ্য মানুষ। কেউ এসেছে ফ্রেশ জ্যুস খেতে, কেউ এসেছে সকালের পোহাতে ডোসা খেতে। অনেকে এসেছেন শুধুমাত্র এন্ট্রি গণেশের কাছে প্রার্থনা করতে।
তাঁর দোকানটি ছোট এবং খুবই সাধারণ। ভিতরে মাত্র দুটি কাঠের টেবিল যা সবসময় ভর্তি থাকে। বেশিরভাগ লোক দাঁড়িয়েই জ্যুস খায়। তবুও এই সাধারণ দোকান থেকে এমন অসাধারণ জ্যুস বেরোয় যা শহরে আর কোথাও পাওয়া যাবে না।
উমেশ আপাদ্যায়ের রসিকতাও তিনি যে উচ্চ মানের জ্যুস তৈরি করেন তারই সমতুল্য। তিনি যতটা জ্যুসের জন্য জনপ্রিয়, ততটাই তাঁর রসিকতার জন্যও পরিচিত। তাঁর রসিকতা খুবই মজাদার, কিন্তু কখনোই অশ্লীল নয়। তিনি সবসময় সর্বজনীন প্রসঙ্গ নিয়ে রসিকতা করেন, যা সকলেই উপভোগ করে।
একদিন, একজন লোক তাঁর কাছে একটি কসবির জ্যুস চাইলেন। উমেশ জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘কোনটা চাইবেন বোনলেস না সহ-বোনলেস?’’
আরেকদিন, দুই বন্ধু তাঁর দোকানে এসেছিল। একজন গাজরের জ্যুস চাইলেন, আর অন্যজন বিটের। উমেশ তাদের দুজনকেই দুটি বিটের জ্যুস দিলেন। বন্ধুরা বিরক্ত হয়ে তাঁকে প্রশ্ন করল, ‘‘আমরা গাজরের জ্যুস চেয়েছিলাম।’’
‘‘হ্যাঁ, সেটাইতো দিয়েছি,’ উমেশ হাসিমুখে বললেন।
‘‘না, আপনি তো বিটের জ্যুস দিলেন!’’
‘‘গাজর আর বিট একই রঙের,’’ উমেশ আরও বেশি হেসে বললেন।
একদিন, তাঁর দোকানে একজন সুন্দরী মহিলা এসেছিলেন। তিনি আমেরিকা থেকে এসেছিলেন। তিনি উমেশকে বললেন যে তিনি এখনও পর্যন্ত ভারতে এত সুন্দর রসালো আম খাননি। উমেশ বললেন, ‘‘আর শুধু আমই নয়! বউদিদেরও এখানে মেলে।’’
তাঁর দোকানের সামনে দিয়ে লোকজন যায়ে-আসে এবং রসিকতা উপভোগ করার জন্য তাঁর জ্যুস কেনে। কিন্তু কেউ কখনও ভেবে দেখেনি যে উমেশের জীবনেরও যে একটি সদয়, মজাদার দিক আছে।
উমেশ একজন অনাথ। তিনি রাস্তায় বড় হয়েছেন। তিনি সরকারী স্কুলে পড়েছেন এবং ছোটখাটো কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। তিনি কখনও বিবাহ করেননি এবং তাঁর কোনো সন্তানও নেই।
একদিন, তিনি তাঁর দোকানের বাইরে বসে জ্যুস রস করছিলেন। হঠাৎ, তিনি দেখলেন একটা ছোট্ট মেয়ে কাঁদছে। মেয়েটির দুধের বোতলটি মাটিতে পড়ে গেছে এবং ভেঙে গেছে। উমেশ মেয়েটিকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু মেয়েটি কান্নায় দিশেহারা হয়ে গিয়েছিল।
উমেশ মেয়েটিকে তাঁর দোকানে নিয়ে গেলেন এবং তাকে কিছু জল দিলেন। মেয়েটি জল খেয়ে শান্ত হলো এবং তাঁকে বলল যে সে তার বাবার সাথে দোকানে এসেছিল। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে তারা হারিয়ে গেছে।
উমেশ মেয়েটিকে দোকানের ভিতরে বসিয়ে রেখে তার বাবাকে খুঁজতে বেরোলেন। তিনি দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়া লোকেদের জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, কিন্তু কেউই মেয়েটির বাবাকে দেখেননি।
উমেশ কিছুক্ষণ দোকানের সামনে ঘুরঘুর করলেন। হঠাৎ, তিনি একজন লোককে দেখলেন যিনি তাঁর মেয়েকে খুঁজছিলেন। উমেশ লোকটিকে তাঁর দোকানে নিয়ে গেলেন এবং তাঁকে মেয়েটিকে দেখালেন। লোকটি খুব খুশি হলেন এবং তাঁর মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন।
লোকটি উমেশকে ধন্যবাদ দিলেন এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন তাঁর মেয়েকে নিয়ে এখানে কীভাবে এলেন। উমেশ তাঁকে সমস্ত কিছু বললেন।
লোকটি উমেশকে বললেন, ‘‘আমার নাম রাজন রামচন্দ্রন। আমি একজন সাংবাদিক। আমি আপনার সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ লিখতে চাই।’’
উমেশ হেসে বললেন, ‘‘সেটা আর কেন?’’
‘‘আপনার গল্প শুনে আমি খুব impressed হয়েছি,’’ রাজন বললেন। ‘‘আপনি যা কিছু করেছেন, তা অসাধারণ।’’
উমেশ কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করলেন। তিনি কখনও মনে করেননি যে তিনি কিছু অসাধারণ করেছেন। তিনি শুধুমাত্র একটি জিনিস ভালোবাসেন সেটিই করেছেন জ্যুস বানিয়ে মানুষের মুখ