ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ভগত সিংহ এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। একজন স্বপ্নবান, দেশপ্রেমিক এবং সাহসী ক্রান্তিকারী। তাঁর জীবন ও কর্ম অনুপ্রেরণার একটি অমূল্য উৎস।
পাঞ্জাবের ব্রিটিশ শাসনাধীন লায়্যলপুরে 1907 সালের 27 সেপ্টেম্বর ভগত সিংহের জন্ম। তাঁর পিতা কেজর সিংহ এবং মাতা বিদ্যাবতী কৌর ছিলেন। শৈশব থেকেই তাঁর মধ্যে দেশপ্রেমের বীজ বপন করা হয়েছিল। লাহোরের ন্যাশনাল কলেজে পড়ার সময় থেকেই তিনি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচার ও নিপীড়ন ভগত সিংহের হৃদয়ে গভীর ক্ষত তৈরি করে। তিনি বিদ্রোহের পথে পা বাড়ালেন। 1928 সালে তিনি ও তাঁর সহযোগীরা 'হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন' গঠন করেন। এই সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চালানো।
লাহোরের কেন্দ্রীয় আইনসভায় বোমা হামলা
1929 সালের 8 এপ্রিল ভগত সিংহ ও বটুকেশ্বর দত্ত লাহোরের কেন্দ্রীয় আইনসভায় বোমা হামলা চালান। হামলার উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশদের সাম্রাজ্যবাদী নীতি ও অত্যাচারের প্রতিবাদ করা। তবে কারও প্রাণহানি হয়নি।
সোহন সিং ফাকের হত্যা
বোমা হামলার পর ভগত সিংহ ও তাঁর সহযোগীরা জেলে বন্দি হন। জেলে অত্যাচার ও নির্যাতনের প্রতিবাদে তারা অনশন শুরু করেন। অনশনকারী এক ক্রান্তিকারী সোহন সিং ফাকের অকালে মৃত্যু হয়। ফাকেরের মৃত্যুর প্রতিবাদে ভগত সিংহ অনশন ভাঙতে অস্বীকার করেন। 116 দিন দীর্ঘ অনশন শেষে 1931 সালের 23 মার্চ ভগত সিং, শিবরাম রাজগুরু এবং সুখদেব থাপরকে ফাঁসি দেওয়া হয়। তাঁদের ফাঁসির দিনটি ভারতের ইতিহাসে একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত।
ভগত সিংহের জীবন ও মৃত্যু ভারতের তরুণদের অনুপ্রাণিত করতে থাকে। তাঁর বীরত্ব, দেশপ্রেম এবং আত্মত্যাগের কাহিনী আমাদের সকলের জন্য একটি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।
ভগত সিংহ কেবল একজন ক্রান্তিকারীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন বিশ্ববাসী। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সব মানুষ সমান এবং সবার স্বাধীনতা ও মর্যাদার অধিকার আছে। তাঁর আদর্শ আজও আমাদের পথপ্রদর্শক।
আমরা সৌভাগ্যবান যে আমাদের মধ্যে ভগত সিংহের মতো একজন মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী জন্মেছিলেন। তাঁর স্মৃতি চিরকাল আমাদের হৃদয়ে জাগ্রত থাকবে।